আটা-ময়দার দামও অস্থিতিশীল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চালের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে যারা খরচ বাঁচাতে দু-এক বেলা রুটি খেতেন, তাদেরও এখন স্বস্তি নেই। কারণ দফায় দফায় বেড়ে চলেছে আটা-ময়দার দামও। সর্বশেষ গত সপ্তাহেও বাজারে খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা।
মাসের ব্যবধানে বাজারে ময়দার দাম কেজিতে ৪ টাকা ও আটার দাম ৫ টাকা বেড়েছে। এর আগে গত মাসেও বাড়ে আটার দাম। সব মিলিয়ে এখন খোলা আটা কিনতে গুনতে হচ্ছে ৪২ টাকা আর ময়দা ৫০ টাকা। প্যাকেটজাত বিভিন্ন আটা ও ময়দার দাম এর চেয়েও ৮ থেকে ১২ টাকা বেশি কোম্পানিভেদে।
চাল আটার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়লে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ খুব চাপে পড়ে। সেটাই হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে যত্নশীল ভূমিকা নিতে হবে। দাম কমানোর জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘসময় খুচরা বাজারে খোলা ময়দা প্রতি কেজি ৩৫ টাকার মধ্যে মিলেছে, আর আটার সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩০ টাকার মধ্যে। প্যাকেটজাত হলে দাম কোম্পানিভেদে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি হতো। কয়েক বছর এমন দামে স্থিতিশীল থাকার পর চলতি বছর দফায় দফায় বাড়ছে আটা-ময়দার দাম। বলতে গেলে এখন আরেক অস্থিতিশীল পণ্য এটি।
বছরের ব্যবধানে ভোগ্যপণ্য দুটির দাম বৃদ্ধির একটি চিত্র পাওয়া যায় সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে। সংস্থাটির তথ্য বলছে, খুচরা বাজারে গত এক বছরে খোলা ময়দার দাম কেজিপ্রতি ১১ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন ময়দা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত বছর এই সময় ৩৪ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। অর্থাৎ বাজারে বছর ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।
একইভাবে প্যাকেটজাত ময়দার দাম সাড়ে ২৩ শতাংশ বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। যা গত বছর একই সময়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে ছিল।
অন্যদিকে বছরের ব্যবধানে খোলা আটার দাম বেড়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ। এক কেজি আটা কিনতে এখন ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৩৪ থেকে ৪০ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা।
খোলা আটার তুলনায় বেশি বেড়েছে প্যাকেটজাত আটার দাম। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত আটার দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। আগে যে আটার প্যাকেট ৩০ থেকে ৩৩ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো সেটা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
এ বিষয়ে রাজধানীর মৌলভীবাজারের মা ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক কার্ত্তিক নন্দী জানান, সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ময়দা দুই হাজার ২০৫ টাকা বিক্রি করছেন। আর আটা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫৭০ টাকা বস্তায়।
তিনি বলেন, এক সময় এ ময়দা এক হাজার ৪০০ টাকা আর আটা ১০০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন বাজার লাফিয়ে বাড়ে; তারপর আবার একটু কমে। ফলে দফায় দফায় বেড়ে এ পর্যায়ে এসেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, এখন খোলা ময়দার দাম বাড়লেও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বাড়েনি। কোম্পানিগুলো একবারে দাম বাড়িয়ে দেয়। ওরা খুচরায় দফায় দফায় দাম বাড়ায় না।
এদিকে মৌলভীবাজার ছাড়াও কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১ নম্বর ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটেও আটা-ময়দা বিক্রি হচ্ছে। সেখানে পাইকারি কিনছেন এমন একজন জানিয়েছেন, আটা-ময়দার কারণে খরচ বেড়েছে বেকারি পণ্য উৎপাদনে। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও একই সমস্যায় পড়েছে।
এ বিষয়ে আটা-ময়দা বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, গমের দাম দ্বিগুণ। যে গম আগে টনপ্রতি ২৮০ ডলারে আমদানি করা যেত, সেটা এখন ৪২০ ডলারে উঠেছে। এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়েছে। অন্য কোনো কারণ নেই। সব পণ্যের মতো বিশ্ববাজারে গমও অস্থিতিশীল।
গুরুত্বপূর্ণ এ ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, চাল আটার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়লে দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ খুব চাপে পড়ে। সেটাই হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে যত্নশীল ভূমিকা নিতে হবে। দাম কমানোর জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।