যশোরে আমন সংগ্রহে সাড়া নেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়

0

আকরামুজ্জামান॥ যশোরে চলতি মৌসুমে সরকারি আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংগ্রহের প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সামান্য পরিমাণ আমন ধান চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে জেলা খাদ্য অধিদফতর। এ অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয় প্রকাশ করে মাঠ পর্যায়ে খাদ্য কর্মকর্তাদের আমন সংগ্রহ জোরদারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে খাদ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এ বছর খাদ্যের মজুত গড়ে তুলতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকারের সংগ্রহের বড় একটি অংশ আমন থেকে করার উদ্যোগ নেয় সরকার। যে কারণে গত ৭ নভেম্বর থেকে সারাদেশে আমন সংগ্রহের কর্মসূচি গ্রহণ করে খাদ্য বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় যশোরে চলতি আমন মৌসুমের সংগ্রহ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। কিন্তু সংগ্রহ অভিযান শুরুর পর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও জেলায় ৫ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়নি। তবে চাল সংগ্রহ সন্তোষজনক বলছে খাদ্য অধিদফতর। এতে আমন সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে সরকার নির্ধারিত প্রতিকেজি ধান ২৭ টাকা ও চাল ৪০ কেজি দরে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় গত ৭ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩ হাজার দশমিক ৭৬০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৮ হাজার ১৫৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু সংগ্রহের প্রায় দুই মাস অতিক্রম করলেও এখনও পর্যন্ত ৫ শতাংশ ধান সংগ্রহ হয়নি। তবে চাল সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। কোনো কোনো উপজেলা থেকে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
জেলা খাদ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, যশোর সদর উপজেলার জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫ হাজার ১৩৫ দশমিক ৭৬০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ১৭০৮ মেট্রিক টন ধান। সেখানে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৭৮ মেট্রিক টন ও চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩৭৩২ দশমিক ২৯০ মেট্রিক টন। মণিরামপুর উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো সিদ্ধ চাল ৪৮২ মেট্রিক টন ও ধান ১৪৪৫ মেট্রিক টন। সেখানে এ পর্যন্ত এক কেজিও ধান সংগ্রহ হয়নি। তবে চাল সংগ্রহ হয়েছে ২৯০ দশমিক ৩৫০ মেট্রিক টন। কেশবপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা সিদ্ধ চাল ৪৭৭ মেট্রিক টন ও ধান ৫৬৯ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ধান ৩৬ মেট্রিক টন ও চাল ১৮৩ দশমিক ৭৫০ মেট্রিক টন। অভয়নগর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা সিদ্ধ চাল ৩০৩৭ মেট্রিক টন ও চাল ৪৫৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল সংগ্রহ হয়নি, ধান সংগ্রহ হয়েছে ৭০০ দশমিক ৫৩০ মেট্রিক টন। ঝিকরগাছা লক্ষ্যমাত্রা চাল ৭০১ মেট্রিক টন ও ধান ৭৯৯ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ধান ৫১ মেট্রিক টন ও চাল ৪৩০ দশমিক ৫৫০ মেট্রিক টন। শার্শায় লক্ষ্যমাত্রা চাল ২৬১১ মেট্রিক টন ও ধান ১১৮০ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ধান ৪৪৪ মেট্রিক টন ও চাল ১২৩৭ দশমিক ২৬০ মেট্রিক টন। বাঘারপাড়ায় লক্ষ্যমাত্রা চাল ৪১৭ মেট্রিক টন ও ধান ১০৬১ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ধান ১১৩ মেট্রিক টন। তবে মোটেও সংগ্রহ হয়নি চাল। চৌগাছা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা চাল ৭৯৩ মেট্রিক টন ও ধান ৯৪০ মেট্রিক টন। এখানে এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়নি ধান। চাল সংগ্রহ হয়েছে ৪৫৩ দশমিক ৮৪০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এ পর্যন্ত আট উপজেলায় সর্বমোট ধান সংগ্রহ হয়েছে ৭২২ মেট্রিক টন ও চাল ৭০২৮ দশমিক ৪৮০ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশেরও কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার নির্ধারিত ধান ও চালের দামের চাইতে বাজারে দাম বেশি। যে কারণে অধিকাংশ কৃষকই তাদের উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫০ শতাংশ চাল সংগ্রহ করতে পেরেছি। তবে ধান সংগ্রহে অনেক পিছিয়ে আছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সরকার যে ধান সংগ্রহ করছে তা মোটা ধানের। অথচ যশোরে মোটা ধানের চাষ কম হয়। যে কারণে কৃষকরা তাদের চিকন ধান বাজারে বিক্রি করে দেন। এতে ধান সংগ্রহে সমস্যা হয়। তবে চুক্তিবদ্ধ মিলাররা অবশ্যই কাঙ্খিত চাল দিবেন বলে তিনি দাবি করেন।