চৌগাছায় অর্ধশত গ্রামই ’পুর’ শব্দ দ্বারা গঠিত

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ মহান স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছা। ১১ টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং ১৬৫ গ্রাম নিয়ে গঠিত উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রামের মধ্যে অর্ধশত গ্রামই হচ্ছে ’পুর’ শব্দ দ্বারা গঠিত। এ সব গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদেরকে অন্য ভাবে উপস্থাপন করতে বেশ স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। একাধিক পুর গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
গ্রাম হল জনবসতির একটি একক। এটি প্রধানত কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে মনুষ্য সম্প্রদায়ের ছোটো বসতি। যেখানে বসবাসরত সম্প্রদায়রা কৃষিকাজ কৃষিভিত্তিক ও বিভিন্ন ছোটখাটো কাজের মাধ্যমে খুব সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করে থাকেন। গ্রাম সাধারণত বড় শহর বা রাজধানী থেকে দুরে অবস্থিত হয়। বহু আগে গ্রামে শহরের মত আধুনিক সুযোগ সুবিধা ছিলনা। সে সময়ে জমিদার ও রাজাগন শহরে বসবাস করলেও গ্রামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তবে বর্তমানে আধুনিকতার অনেক ছোঁয়া লেগেছে গ্রাম গুলোতে।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৮ সালের দিকে যশোরের ঝিকরগাছা, ঝিনাইদাহ জেলার কালিগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলা হতে দেড় শতাধিক গ্রাম নিয়ে চৌগাছা উপজেলা গঠিত হয়। বলাচলে নবীন এই উপজেলা আজ দেশ তো বটেই দেশের বাইরেও অত্যান্ত সুনাম অর্জন করেছে। যে দেড়শতাধিক গ্রাম নিয়ে চৌগাছা উপজেলা গঠিত তার অর্ধশত গ্রামই হচ্ছে ’পুর’ শব্দ দিয়ে গঠিত। পুর শব্দদ্বারা গঠিত গ্রামগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সৈয়দপুর, কোটালীপুর, মহম্মদপুর, রঘুনাথপুর, জগন্নাথপুর, গরীবপুর, জাহাঙ্গীরপুর, হুদাফতেপুর, পিতাম্বরপুর, উজিরপুর, মুক্তরপুর, ফতেপুর, আজমতপুর, রামভাদ্রপুর, শাহাজাদপুর, ছোটকাবিলপুর, বড় কাবিলপুর, মুকুন্দপুর, জগদীশপুর, মির্জাপুর, স্বর্পরাজপুর, লস্কারপুর, মন্মতপুর, বেড়গোবিন্দপুর, মশ্মমপুর, সাদিপুর, রুস্তমপুর, ভবানীপুর, বিশ্বনাথপুর, নিয়ামতপুর, হয়াতপুর, হাকিমপুর, দেবিপুর, দুলালপুর, আরজি সুলতানপুর, যাত্রাপুর, হাজীপুর, তাহেরপুর, বেড়তাহেরপুর, স্বরুপপুর, টেংগুরপুর, কমলাপুর, মাধবপুর, তিলেকপুর, গদাধরপুর, ইদ্রোপুর, নারায়নপুর, ভগমানপুর, মির্জাপুর, বাদেখাঁনপুর, বড়খাঁনপুর, কিসমতখাঁনপুর, মাকাপুর, বল্লভপুর, রামকৃষ্ণপুর, রাজাপুর, বর্ণিসাহাপুর, দৌলতপুর, চাঁদপুর, ইছাপুর ও কংশারীপুর।
ইছাপুর গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান, কংশারীপুর গ্রামের আজগার আলী, বড়খানপুর গ্রামের মিহির আলী, সৈয়দপুর গ্রামের হারুন অর রশিদ, কাবিলপুর গ্রামের জুল হোসেন, জগদীশপুর গ্রামের রোকনুজ্জামান বাবু জানান, গ্রামে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের কাছেই গ্রাম হচ্ছে তাদের অহংকার আর গৌরবের একটি স্থান। কেননা গ্রাম থেকেই সব কিছুরই উৎপত্তি। গ্রামের কাঁদা মাটি মেখে যে শিশুটি বড় হয়েছিল, সে এখন দেশ কিংবা বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে গ্রামকে অলংকৃত করেছেন। যারাই সুনামধন্য হয়েছেন খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের জন্ম কোন না কোন গ্রামে। উপজেলার দেড় শাতাধিক গ্রামের মধ্যে অর্ধশত গ্রামই হচ্ছে ’পুর’ দ্বারা গঠিত। সেই পুরদ্বারা গঠিত গ্রামের বাসিন্দা হতে পেরে আমরা নিজেদেরকে ধন্য মনে করি। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ’পুর’ দ্বারা গ্রামের সংখ্যা যেমন বেশি, কেমনি এই সকল গ্রামের মাটিতে বড় হয়ে অনেকেই দেশ বিদেশে নিজ নিজ গ্রামকে পরিচিত করেছেন, এ জন্যই নিজেদেরকে ধন্য বলে মনে হয়। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী গ্রামে বসবাসকারী জনসংখ্যা হল ১১ কোটি ৪ লাখ ৮০ হাজার ৫১৪ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর গ্রামীণ শাসন ও কর ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এ ব্যবস্থায় গ্রামের জমির পূর্ণ অধিকার পায় জমিদার। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গ্রাম পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নির্বাচন পদ্ধতি চালু হয়েছে এবং প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠেছে।