চৌগাছার কুঠিপাড়ায় তৈরী হচ্ছে সিটিগোল্ডের গহনা অর্ধশত নারীর কর্মসংস্থান

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর)॥ শিউলী খাতুন একজন নারী, গৃহবধু আবার একজন মা, সংসারে তার কতই না কাজকর্ম। পরিবারের স্বামী সন্তানসহ আর পাঁচজনের দিনে তিন বেলা খাবার তৈরী করা, সন্তানকে ¯েœহ মমতা দিয়ে আগলে রাখা, তারমধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা গহনা তৈরীর কারখানায় পরিশ্রম করা। এখানে যা রোজগার করেন তার পুরোটাই তুলে দেন পরিবারের কর্তার হাতে। চৌগাছা পৌর এলাকার কুঠিপাড়া মহল্লায় অন্তত অর্ধশত নারী বছরের পর বছর সিটি গোল্ডের গহনা তৈরী করে এভাবেই রোজগার করছেন। তবে কাঁচা মালের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারনে এই ব্যবসা এখন মন্দাভাব এমনটিই জানালেন ব্যবসার মুল মালিক ইকবাল হোসেন। চৌগাছা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড, ঐতিহ্যের চাঁদরে মোড়ানো এক গ্রাম সে হচ্ছে কুঠিপাড়া। বৃটিশ শাসনামলে বিলেতী বাবুদের আরাম আয়েশের অন্যতম একটি স্থান কুঠিপাড়া। গ্রামটি আজও অসংখ্য স্মৃতি বহন করে যাচ্ছে। এখানকার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন এক সময়ে কৃষিকাজসহ নানা ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রায় এক যুগ আগে তিনি সিটি গোল্ডের গহনা তৈরীর মনস্থির করেন। এরজন্য কোন প্রশিক্ষন বা কারও সহযোগীতা লাগেনি। নিজের ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন সিটিগোল্ডের গহনা তৈরীর মিনি কারখানা। শুরুতে অল্প সংখ্যক কারিগর দিয়ে গহনা তৈরী শুরু করেন। কিন্তু তার কারখানায় বর্তমানে অর্ধশত নারী কাজ করছেন। তাদের প্রত্যেককে মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক দেন। কারখানা থেকে যা রোজগার হয় তাতে মোটামুটি ভাবে চলে ইবকাল হোসেনের সংসার।
রবিবার সরেজমিন সিটিগোল্ড গহনা তৈরীর কারখানায় যেয়ে দেখা যায়, মহল্লার নারীরা পরিবারের কাজ শেষ করে বেশ সকাল সকালই গহনা তৈরী কাজ শুরু করেছেন। বাড়ির আঙিনায় ছোট ছোট ঘর তৈরী করে প্রতিটি ঘরে ৩ থেকে ৪ জন করে নারী বসে নিখুঁত হাতে তৈরী করছেন বিভিন্ন ধরনের গহনা। এরমধ্যে কানের দুল, নাকফুল, কন্ঠচিক, সিতাহার, চুড়ি, কাটা টিকলী উল্লেখযোগ্য। সরিশার দানার মত ছোট্ট ছোট্ট দানা একত্রিত করে তৈরী হচ্ছে একটি গহনা। সেটি আগুনে ভাল ভাবে পুড়িয়ে পুনরায় পানিতে ভিজিয়ে ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছে একটি গহনা। কাজটি দেখাতে যতটা সহজ তৈরী করা তার চেয়ে অনেক কঠিন জানান কারিগররা। গহনা তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পারকরা কারিগর স্বপ্না বেগম, রিনা খাতুন, শিউলী বেগম, জোসনা খাতুন, রেকসোনা খাতুন, চায়না বেগম, মিনু খাতুন বলেন, আমরা প্রত্যেকে সংসারের কাজ করার পাশাপাশি এখানে গহনা তৈরীর কাজ করি। নিজেদের বাড়ির পাশেই কাজ হয় সেকানে তেমন কোন সমস্যা হয়না। কারখানা মালিক গহনা তৈরীর সকল মালামাল এনে দেন আমরা তা একত্রিত করে এক একটি গহনা তৈরী করি। এখান থেকে মাসে যা রোজগার হয়, তা আমাদের সংসারের কাজে ব্যয় করি। তারা বলেন, সকালে সংসারের কাজ করে দুপুর পর্যন্ত বসে সময় পার করতাম। আবার দুপুরে রান্নাসহ অন্যান্য কাজ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই ভাবে পার হত। সেই সময়ে আমরা এই গহনার কাজ করি। সিটি গোল্ড গহনা প্রস্তুতকারক ইকবাল হোসেন জানান, মধ্যবৃত্ত পরিবারে জন্ম, সেভাবে লেখাপড়া করতে পারেনি। এক সময়ে কৃষিকাজসহ ছোটখােেটা ব্যবসা করে সংসার চালাতাম। এক নিকট আত্মীয়র মাধ্যমে সিটি গোল্ড গহনার গল্প শুনে কাজ শুরু করি। প্রায় একযুগ ধরে ব্যবসা করছি, তবে বর্তমান সময়ে ব্যবসায় বেশ মন্দাভাব যাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে গহনা তৈরীর মালামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। মালামালের যে ভাবে দাম বেড়েছে, সেভাবে কিন্তু গহনার দাম বাড়েনি। একটি গহনা তৈরী করে তা বাজারে বিক্রির পর সব খরচ বাদ দিয়ে তার ২ থেকে ৫ টাকা আয় হয়, এতেই তিনি খুশি। তার কারখানাতে তৈরী গহনা জেলা শহর যশোর ও রাজধানী ঢাকাতে বিক্রি হয়।