আবারও বাড়ছে মানবপাচার

0

দালালচক্রের মিথ্যা আশ্বাসে প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি তরুণ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের পরিণতি হয় অত্যন্ত খারাপ। হয় সাগরে ডুবে মারা যায়, না হয় মরুভূমিতে অনাহারে বা তৃষ্ণায় জীবন যায়। কখনো কখনো ঠাঁই হয় গণকবরে। অনেক সময় জিম্মি করে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয় এবং তাদের পরিবারকে বাধ্য করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিতে। তার পরও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক তরুণই দালালদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পাচারের একটি প্রধান রুট হচ্ছে লিবিয়া-তিউনিশিয়া চ্যানেল। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এই রুটে মানবপাচারের সঙ্গে ১৮টি চক্র বা সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা ছড়িয়ে রয়েছে ১৫টি দেশে। ধারণা করা হয়, এ রকম আরো অনেক পাচারকারী চক্রই সারা দেশে সক্রিয় রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে কিছু দালাল ধরা পড়লেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাধারণত তারা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কোনো কোনো দেশে অবস্থান নিয়ে পাচার সিন্ডিকেট পরিচালনা করে।
২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে লিবিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো বন্ধ রয়েছে। সে কারণে পাচারকারীরা তরুণদের ভারত, নেপাল, দুবাই, মিসর, জর্দান বা অন্য কোনো দেশ দিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালের শুরু থেকে পরবর্তী ১৮ মাসে শুধু দুবাইয়ের ভ্রমণ ভিসা নিয়ে এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৪ জন নারী ও পুরুষ দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে ফেরত এসেছেন মাত্র ২১ হাজার ৭৫৪ জন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও বাকি এক লাখ ৭৮ হাজার ফিরে আসেননি। তাঁদের একটি বড় অংশকে ইউরোপে পাচারের চেষ্টা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করেছে ছয় লাখের বেশি মানুষ। একই সময়ে সাগরে ডুবে মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশিদের ইউরোপে পাড়ি জমানোর প্রবণতা অনেক বেড়েছে। ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর থেকে ২৭ হাজার ৫৫১ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে লিবিয়ার কোস্ট গার্ড ও উপকূলীয় নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশাসন। এদের মধ্যে বাংলাদেশি রয়েছে দুই হাজার ৮৮৮ জন। মানবপাচার বৈধ অভিবাসনকেও ঝুঁকিতে ফেলছে। ইউরোপের দেশগুলো সেখানে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশকে নিয়মিত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আবার পথে যারা ধরা পড়ছে তাদেরও ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে তরুণদের রক্ষা করতে হবে। এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাতে হবে। একই সঙ্গে দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বৈধভাবে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে।