খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের হামলায় রণক্ষেত্র

0

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা॥ খুলনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকাল ও বিকেলে দুই দফায় স্থানীয় বিএনপির দুই অংশের কর্মসূচি পালনে পুলিশ বাঁধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিএনপি অফিস সংলগ্ন কেডি ঘোষ রোড, হেলাতলা মোড়, হেরাজ মার্কেট, স্যার ইকবাল রোড, মহেন্দ্র দাস রোড এলাকা। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও গুলিবর্ষণের বিপরীতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোঁড়ে। এ সময় বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীসহ কর্মরত পাঁচ সাংবাদিকও আহত হন। পুলিশ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে।


বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবিতে খুলনায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এ সময় পুলিশ এসে অনুমতি ছাড়া রাজপথে কোন ধরনের কর্মসূচি পালন করা যাবে না বলে জানায়। এ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সাথে পুলিশের কর্মকর্তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় পুলিশ টেনে হিচড়ে কর্মীদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টার এক পর্যায়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। লাঠিচার্জে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মীর কায়সেদ আলী, সিরাজুল হক নান্নুসহ অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।


দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পাঁচজন সাংবাদিক আহত হন। আহত সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক জন্মভূমি ও দৈনিক ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক দেবব্রত রায়, যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন আমীর সোহেল, সময় টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন সাংবাদিক আব্দুল হালিম, এসএ টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন ইব্রাহিম এবং প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন। এদের মধ্যে দেবব্রত রায়ের আঘাত গুরুতর। তার মাথায় একাধিক সেলাই লেগেছে। খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।


নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, নেত্রীর মুক্তির জন্য মানবিক কর্মসূচির আয়োজন করে নগর ও জেলা বিএনপি। সকাল থেকে প্রশাসন কার্যালয় ঘিরে রাখে। পুলিশকে তিনি সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পুলিশ তা না করে সাধারণ নেতাকর্মীর ওপর হামলা করে। জনতার রোষাণলে পড়ে পুলিশ পিছু হাটতে বাধ্য হয়। পরে আবার সমাবেশ শুরু হয়। সোয়া ১২ টার দিকে আবারও হামলা চালায়। নেতাকর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য গুলি করার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত ও ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
এদিকে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আমির এজাজ খান, মীর কায়সেদ আলী, শেখ মোশাররফ হোসেন, জাফরুল্লাহ খান সাচ্চু, শাহ জালাল বাবুল, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, শেখ আব্দুর রশিদ, মোল্লা খায়রুল ইসলাম, সাইফুর রহমান মিন্টু, সিরাজুল হক নান্নু, আবু হোসেন বাবু, মাহবুব কায়সার, নজরুল ইসলাম বাবু, জিএম কামরুজ্জামান টুকু, মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ, আসাদুজ্জামান মুরাদ, শামসুল আলম পিন্টুসহ অনেকে। পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন বিএনপি নেতা শেখ জামিরুল ইসলাম জামিল, মেহেদী হাসান সোহাগ, হেদায়েত হোসেন হেদু, মোস্তফা ও জাহাঙ্গীর হোসেন।
বিকেলে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ : একই দাবিতে বিকেলে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দলীয় কার্যালয় ও আশেপাশে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সেখানে আসেন এবং অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা যাবে না জানিয়ে তাদেরকে রাস্তা ছেড়ে যেতে বলেন। সেখানে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, শফিকুল আলম তুহিন, এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীর নেতৃত্বে সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ কর্মীদের নিয়ে অবস্থান ছেড়ে বড় বাজার হেলাতলা মোড়ের দিকে রওনা হন। সে সময় পুলিশ বিনাউস্কানিতে কর্মীদের ধাওয়া করে বলে অভিযোগ করেন নেতৃবৃন্দ। কর্মীরাও রুখে দাঁড়িয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। বৃষ্টির মতো পড়তে থাকা ইটের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশকে দৌড়ে পালাতে দেখা যায়। তারা থানায় মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। ইট নিক্ষেপ বন্ধ হলে পুলিশ পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া করে। সে সময় বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতাকর্মীরাও বড় বাজারের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের ওপর পাল্টা ইট মারতে থাকে।
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় বিএনপি কর্মী শাহাবুদ্দিন, মাসুদুর রহমান, তৌহিদুজ্জামান মুকুল, ইউনুস, শুভ কুমার দাস ও রবিকে পুলিশ আটক করে বলে দাবি করেছেন মহানগর বিএনপি নেতা শফিকুল আলম তুহিন।
পুলিশের লাঠিচার্জে ও গুলির ছররায় রেজাউল ইসলাম খোকন, নগর ছাত্রদলের আহবায়ক ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তিসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন আজিজুল হাসান দুলু, সুলতান মাহমুদ, শেখ হাফিজুর রহমান, মাসুদ পারভেজ বাবু, কে এম হুমায়ুন কবির, মাহবুব হাসান পিয়ারু, তৈয়েবুর রহমান, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, একরামুল হক হেলাল, শামমি কবির, কামরান হাসান, মোল্লা সাইফুর রহমান, আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস, মিরাজুর রহমান মিরাজ, রফিকুল ইসলাম বাবু, শেখ ইমাম হোসেন, ইবাদুল হক রুবায়েদ, কাজী নেহিবুল হাসান, আব্দুল আজিজ সুমন, ফারুক হিল্টন, আতাউর রহমান রুনু, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি, ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি, মো: তাজিম বিশ^াস, সেতারা সুলতানা, গোলাম মোস্তফা তুহিন প্রমুখ।
সন্ধ্যায় মশাল মিছিল : ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সন্ধ্যায় নগরীতে মশাল মিছিল হয়েছে। জেলা বিএনপির সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পীর নেতৃত্বে ফেরিঘাট মোড় থেকে মিছিল বের হয়ে শান্তিধামের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানানো হয়। সেই সাথে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে পুলিশি বাধা, হামলা, লাঠিচার্জ, গুলি, টিয়ারসেল নিক্ষেপের নিন্দা জানানো হয়। মিছিলে অংশ নেন মিরাজুর রহমান মিরাজ, নাদিমুজ্জামান জনি, আয়ুব্ মোল্লা, শাহিন শেখ, শরিফুল ইসলাম বকুল, মঞ্জুর আরফিন, আব্দুল মালেক, রুবেল মীর, সাগর শেখ, শাহিন মোল্লা প্রমুখ।