দুবাই নিয়ে বাধ্য করা হচ্ছে দেহ ব্যবসায়: ওদের টার্গেট ১৮ থেকে ২৪ বছরের সুন্দরী নারী

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ওদের টার্গেট ১৮ থেকে ২৪ বছরের সুন্দরী নারী। প্রতিমাসে বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কর্মস্থল দুবাইয়ের ড্যান্সক্লাব। যেতে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। প্রতারক চক্রের এমন লোভনীয় অফারের ফাঁদে পা দিয়ে অনেক নারী পড়েছেন মহাসংকটে। তাদের প্রায় সবাইকেই দেহ ব্যবসায় বাধ্য করছে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্র। অন্যদিকে, পুরুষদেরও এমন লোভনীয় চাকারির অফার দিয়ে নেওয়া হতো সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। তবে দিনের পর দিন তাদের ঘুরিয়ে আসছিল প্রতারক চক্র। টাকা চাইতে গেলে দেওয়া হতো প্রাণনাশের হুমকি।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে এই চক্রের অন্যতম হোতা শামসুদ্দিনকে (৬১) আটক করে র‌্যাব-১ এর একটি দল। তখন তার কাছ থেকে দুইটি মোবাইল ফোন, একাধিক ব্যক্তির পাসপোর্ট, একটি বিএমইটি কার্ড এবং একজন নারী ও তিনজন পুরুষ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। ব্রিফিংয়ের পর এক ভুক্তভোগী জসিমের সঙ্গে কথা বলেন সংবাদমাধ্যমকর্মীরা। তার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছায়। কথার একপর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন জসিম। গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকেই তখন তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। দিনমুজুর এই ব্যক্তি সুদের ওপর সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন ওই চক্রকে। গত ৬ মাস ধরে তাকে দুবাই পাঠানোর কথা বলে ঘুরাচ্ছিল চক্রের সদস্যরা। এখন ক্রমেই বাড়ছে তার ঋণের বোঝা।
লে. কর্নেল মোমেন বলেন, ‌‘পাচারকারী চক্রটি ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়াই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) নকল কার্ড তৈরি করত। তাদের মোবাইল ফোন থেকেই ৮২টি পাসপোর্টের ছবি পাওয়া গেছে। তারা বিভিন্ন সময় দুবাই, মালয়েশিয়া এবং ভারতে পাচার করেছে। গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কার্ড তৈরি করা হলেও তাদের বেশিরভাগকেই দুবাইয়ে পাচার করে আসছিল চক্রটি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের এজেন্ট রয়েছে উল্লেখ করে লে. কর্নেল মোমেন বলেন, ‘পাচারকারীরা বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল মানুষদের ফাঁদে ফেলে, দুবাইয়ে নিয়ে যেতেন। তাদের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রায় জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। যাদের অধিকাংশই নারী। নারীদের বিদেশে বিভিন্ন পেশায় লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির কথা বলা বিক্রি করে দিত। পরে জোরপূর্বক ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো হতো। সম্প্রতি মানব পাচারকারী চক্রের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র‌্যাব। গ্রেফতার শামসুদ্দিনের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে আল মোমেন জানান, বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থানরত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে তারা এই চক্রের কাজ করতেন। জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতারক চক্র মেয়েদের বিদেশে যেতে প্রলুব্ধ করে। কোনো তরুণী বিদেশ যেতে রাজি না হলে, নানান হুমকি দেওয়া হতো। তাছাড়া এ চক্রটি বিদেশ যেতে ইচ্ছুক অনেক পুরুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছে। র‌্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, ‘সম্প্রতি জিয়া চক্রের মাধ্যমে বিমানবন্দর দিয়ে কয়েকজন নারী পাচার করা হচ্ছে, এমন খবরে আমরা তাদের উদ্ধার করি। পরবর্তীতে গতকাল আমরা তথ্য পেলাম, জিয়া চক্রটি আবারও এক নারীকে পাচারের চেষ্টা করছে। এরপর অভিযান চালিয়ে ওই নারী ও তিন পুরুষকে উদ্ধার করা হয়। এই জিয়ার বিভিন্ন এলাকায় নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা প্রথমে অল্পবয়সী নারীদের টার্গেট করে। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ঢাকায় এনে হোটেলে রেখে পাসপোর্ট ও ‘বিএমইটি’ কার্ড তৈরি করে দেওয়া হতো। এ ছাড়া বিদেশে যেতে করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেটও করে দিত। এরপরেই নারীদের বিদেশে পাচার করে দেওয়া হতো। চক্রটি দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় পাচার করত। বিএমইটি কার্ডটি কোনোরকম ট্রেনিং ছাড়াই করে দিত। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একজন দক্ষকর্মী হিসেবে বিএমইটি কার্ড তৈরি করতে একমাস সময় লাগত। আমরা একজন ভিকটিমকে পেয়েছি, যাকে ট্রেনিং ছাড়াই বিএমইটি কার্ড দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সেটি হারিয়ে গেলে তার অনুপস্থিতিতেই আবারও কার্ড করে দেওয়া হয়। এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়, পাচারকারী চক্র অতি কৌশলে নকল এই বিএমইটি কার্ড তৈরি করে নারীদের পাচার অব্যাহত রেখেছে। পাচার করতে যাওয়া একজন নারীকে দেশে থাকা অবস্থায় ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। তাকে আরও টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। তবে উদ্ধার পুরুষ ভিকটিমদের বিদেশে পাঠানোর জন্য দালাল চক্র ৩ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু মেয়েদের পাঠানোয় কোনো টাকা নেওয়া হতো না।’