যশোরের কুখ্যাত কাঁকন খুন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরে একাধিক সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে কুখ্যাত আব্দুর রহমান কাঁকন খুন হয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তাঁতী লীগের সাবেক সদস্য সচিব ছিলেন। গত বুধবার রাতে শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া কবরস্থান মোড়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু কী কারণে তাকে খুন করা হয়েছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে খুনের সাথে জড়িতদের কয়েকজনকে একটি গোয়েন্দা সংস্থা শনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে সন্ত্রাসী জিতুসহ ৩ জনকে পুলিশ আটক করেছে এমন খবর পাওয়া যায় গতকাল। যদিও পুলিশ আটকের বিষয়টি স্বীকার করেনি। নিহত আব্দুর রহমান কাঁকন ফরিদপুর সদরের চর ভদ্রাসন এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে। বর্তমানে তিনি যশোর শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া কবরস্থানের পূর্ব পাশের জনৈক রাজু আহমেদের বাড়ির ভাড়াটিয়া।


নিহতের ছোটভাই রিফাত হোসেন টুটুল জানান, তিনি পুরাতন কসবা কাজীপাড়ায় থাকেন। গত বুধবার রাতে খবর পান তার ভাই কাঁকনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। তিনি লোকমুখে জানতে পেরেছেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার ভাই কাঁকন মোল্লাপাড়া কবরস্থান মোড়ে নিজ বাসার কাছে নারায়ণ ঘোষের চায়ের দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে আচমকা তার ভাইয়ের বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে রাত ১১টা ৫ মিনিটের দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, তার ভাই রূপদিয়া এলাকায় মাছের ঘেরের ব্যবসা করতেন। তবে কারা কীজন্যে তাকে খুন করেছে তা বলতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, তার ভাইয়ের স্ত্রী এবং বুশরা নামে ৭ বছর বয়সের একটি মেয়ে রয়েছে।
নিহতের মা সুফিয়া বেগম বলেন, তার ছেলেকে কারা কীজন্যে হত্য করেছে তা তিনি জানেন না। তিনি তার ছেলের হত্যার বিচার চান। মোল্লাপাড়া কবরস্থান মোড়ের চা দোকানি নারায়ণ ঘোষের পাশের মুদি ব্যবসায়ী নুরন্নবী বলেন, তিনি ওই সময় দোকানের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ শব্দ শুনে জানতে পারেন, কে বা কারা কাঁকনকে ছুরি মেরেছে। কমিউনিটি পুলিশিং অফিসের শাহ আলমসহ কয়েকজন তাকে ইজিবাইকে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে জানতে পারেন কাঁকন মারা গেছেন। নারায়ণ ঘোষের চায়ের দোকানের সামনের মুদি ব্যবসায়ী হালিমা বেগম জানান, তিনি দোকানের ভেতরে বসে টেলিভিশন দেখছিলেন। এ কারণে তিনি ঘটনাটি দেখতে পাননি। তবে জানতে পেরেছেন, কারা যেন কাঁকনকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেছে।
কোতয়ালি থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, কী কারণে কারা তাকে তাকে হত্যা করেছে সেই রহস্য তারা এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র জানায়, হত্যা মিশনে ছিলো এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী জিতু, সাদ্দাম, সফি ও সনি। বড় বাজারের চাঁদাবাজি নিয়ে কাঁকনের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব ছিলো। এর জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর সেখান থেকে পালিয়ে জিতু, সাদ্দাম ও সনি মোল্লাপাড়ার জনৈক টগরের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। রাতে সেখানে আত্মগোপন করে থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে অন্যত্র চলে যায়। এ খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিবি পুলিশ মোল্লাপাড়ায় গিয়ে টগরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
সূত্র জানায়, গত বুধবার রাতে কাঁকন খুন হওয়ার পর পুলিশ সন্ত্রাসী জিতুর মা ও খালুসহ কয়েকজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। চা দোকানি নারায়ণ ঘোষকেও হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর বিকেলে নানা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বাঘারপাড়ার খাজুরা এলাকা থেকে সন্ত্রাসী জিতুকে আটক করে। এছাড়া মোল্লাপাড়া থেকে সফি ও সাদ্দামকেও পুলিশ আটক করেছে। কোতয়ালি থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. তাজুল ইসলাম জানান, জিতুর মা ও খালুকে তারা আটক করেননি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছেন। সাদ্দাম, জিতু ও সফি নামে কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঠিক নয়। একাধিক সূত্র জানায়, কাঁকন বিতর্কিত যুবক। বড় বাজারে চাঁদাবাজি ও মানুষকে ব্ল্যাকমেইলিংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। কয়েক বছর আগে শহরের গাড়িখানা রোডে প্রতিষ্ঠিত একজন সাংবাদিককে তিনি হেনস্তা করেছিলেন। এ ঘটনায় সেই সময় সাংবাদিক সমাজ তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলো। সাংবাদিকদের আন্দোলনের কারণে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গাড়িখানা রোডে কাঁকনের আস্তানা ভেঙে দিয়েছিলো। সেখান থেকে মাদকদ্রব্য ও লাঠিসোটা উদ্ধার হয়। এছাড়া খুন হওয়ার ৩ সপ্তাহ আগে তার বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে একটি মামলা হয়।