হঠাৎ বৃষ্টিতে চৌগাছার আমন ধান চাষিরা বিপাকে কেটে রাখা ধানের জমিতে পানি

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ শীতের শুরুতে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশংকা করছেন চাষিরা। এক দিকে ঝিরঝির বৃষ্টি অন্যদিকে মৃদু বাতাস যা পাকা আমন ধানের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ইতোমধ্যে ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষক। মাঠে বিঘার পর বিঘা কাটা ধান গত তিন দিনের পানিতে ভিজে একাকার। ধানের বিচেলী যেমন তেমন ধান কিভাবে রক্ষা করবে সেই চিন্তায় বিভোর চাষিরা। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে গত তিন ধরে চৌগাছার আকাশ মেঘাছন্ন। দিন কিংবা রাত থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টিপাত, সেই সাথে বয়ে যাচ্ছে মৃদু হাওয়া। অসময়ের এই বৃষ্টিপাতে মাঠের রোপা আমনের অপুরোনীয় ক্ষতি হবে বলে আশংকা করছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চৌগাছা উপজেলা জুড়ে ১৭ হাজার ৬শ ৮৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি-ধান ৮৭, ব্রি-ধান ৭৫, ব্রি-ধান ৭ উল্লেখযোগ্য। মাটির গুনাগুন ভেদে এলাকা বিশেষ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলনের আশা ছিল কৃষক ও কৃষি অফিসের। সোমবার দুপুরে উপজেলার চাঁদপুর, সিংহঝুলী, কদমতলা, মাশিলাসহ বেশ কিছু গ্রামের মাঠে যেয়ে দেখা যায়, কৃষকরা আমন ধান কাটতে শুরু করেছে। গেল কয়েক দিনের বৃষ্টির আগে থেকেই চাষিরা মাঠে বিঘার পর বিঘা ধান কেটে জমিতেই ফেলে রাখেছেন। রোদে শুকানোর পর তা বাড়িতে এনে ঝেড়ে ধান গোলাতে আর বিচেলী গো-খাদ্য হিসেবে বাড়ির আঙিনায় গাদা দিয়ে রাখবেন। অন্য বছরের মত এ বছরও চাষিরা অনেক আশা বুকে ধারন করে মাঠে আমন ধান চাষ করেন। কৃষকের সেই স্বপ্ন বলাচলে পুরোনের পথে। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারনে সেই স্বপ্ন এখন ভঙ্গের পথে। গো-খাদ্য হিসেবে বিচেলী তৈরী যেমন তেমন ধান কি ভাবে বাড়িতে আনবে সেই চিন্তায় গ্রামের পর গ্রামের চাষিরা বিভোর। ধান ক্ষেতে কর্মরত কৃষক উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে ৬/৭ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেন। আবহাওয়া ধান চাষের উপযোগী হওয়ায় সকল জমিতেই ভাল ফলন হয়। ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ বিঘা জমির ধান কেটে জমিতেই রাখা ছিল। ধান ও বিচেলী রোদে শুকিয়ে উঠার আগ মহুর্তে শুরু হয় বৃষ্টি যা এখন হচ্ছে। কেটে রাখা সব জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। সকাল থেকে ক্ষেতের জমা পানি বের করার চেষ্ট করছি কিন্তু পানি বের হচ্ছেনা। এতে করে ধান যেমন নষ্ট হবে তেমনি গো খাদ্য (বিচেলী) নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মাশিলা গ্রামের কৃষক গোলাম মওলা জানান, বৃষ্টির দুই দিন আগে ধান কেটে জমিতে রেখেছিলাম। শুকিয়ে উঠাার আগেই বৃষ্টির পানিতে সব ধান এখন জমিতে পড়ে আছে। বৃষ্টি অব্যহত থাকলে এ বছর ধান ও বিচেলীর কি পরিনতি হয় জানিনা। কদমতলা গ্রামের মৃত মুন্সি মন্ডলের ছেলে কৃষক নুর ইসলাম জানান, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেন। তাদের এলাকার মাঠ তুলনা মূলক কিছুটা নিচু হওয়ায় তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। বৃষ্টির আগে পাকা ধান কেটে রাখা হয়েছিল, সেই সব ধান এই বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন। এ ছাড়া বৃষ্টির সাথে মৃদু বাতাসে পাকা ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। মাটিতে মিশে যাওয়া ধানও এই পানিতে ক্ষতি হবে বলে কৃষকরা মনে করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস বলেন, বৈরী আবহওয়ার কারনে আমন চাষিরা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন, তবে বৃষ্টি যদি দীর্ঘস্থায়ী না হয় তাহলে ধানের তেমন কোন সমস্যা হবেনা। যে সকল জমিতে পানি জমে গেছে, কৃষককে ওই জমির আইল কেটে পানি বের করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।