যেভাবে প্রশ্নপত্রের ক্রেতা থেকে বিক্রেতা হয়ে উঠেছিল পাঁচ ব্যাংকার

0

নুরুজ্জামান লাবু॥ পাঁচ ব্যাংকের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের গ্রেফতার হওয়া সদস্যদের পাঁচ জনই ব্যাংকার। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিনেই চাকরি পেয়েছিল তারা। পরে তারাই সিন্ডিকেট গড়ে বিক্রি করতো ফাঁস হওয়া প্রশ্ন। এ কাজ করে বিপুল সম্পদও অর্জন করেছে তাদের প্রত্যেকে। এমনকি স্বজনদেরও প্রশ্ন দিয়েছিল তারা। রিমান্ডে নেওয়ার পর গোয়েন্দা-পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে তারা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা অনেক বছর ধরেই বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযানও চলছে। গত ৬ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাকরির প্রশ্নফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলো—মোক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন। পরে গ্রেফতার করা হয় সোহেল রানা, এমদাদুল হক খোকন ও এবিএম জাহিদকে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জানে আলম মিলন রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, শামসুল হক শ্যামল জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ও মোস্তাফিজুর রহমান মিলন পূবালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। এ ছাড়া সোহেল রানা ও এমদাদুল হক খোকন জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারকৃত ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রশ্ন কিনেই চাকরিতে ঢুকেছিল। এজন্য যে টাকা ব্যয় হয়েছিল সেটা তুলতে তারা নিজেরাও প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্র গড়ে তোলে। সূত্র জানায়, প্রশ্নফাঁসের মামলায় এর আগে আরও দুবার গ্রেফতার হয়েছিল সোহেল রানা। কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও এ কাজে জড়ায় সে। ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশৈংকল এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখায় কর্মরত ছিল। গ্রেফতার হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। গ্রেফতার হওয়া খোকনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। সে জনতা ব্যাংকের ঢাকেশ্বরী শাখায় কর্মরত ছিল। মোস্তাফিজুর রহমান মিলনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে। জানে আলম মিলন সিরাজগঞ্জের সলংগা এলাকার। রূপালী ব্যাংকের সাভার শাখায় কর্মরত ছিল সে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শামসুল হক জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখায় কর্মরত ছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারকৃত সবাই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা স্বীকার করেছে। পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তার মধ্যে শামসুল হক শ্যামল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। রিমান্ড শেষে সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংকের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল হোতা দেলোয়ারকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেলোয়ারের বাড়ি রাজশাহীতে। সে আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিল। গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানের পর থেকেই সে পলাতক। আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিশিয়ান মোক্তারুজ্জামান রয়েল আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে, দেলোয়ারের মাধ্যমে তারা প্রশ্নপত্র হাতে পেতো। গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, দেলোয়ারকে ধরতে পারলে এ চক্রের ওপরের স্তরে কে বা কারা আছে তা জানা যাবে।