জীবনবাজি রেখে কাজ করেও করোনার প্রণোদনা পাননি যশোরের বেশিরভাগ চিকিৎস

0

বিএম আসাদ ॥ জীবন বাজি রেখে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েও করোনা প্রণোদনার টাকা পাননি যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকগণ।  গত ২০২০ সালের মার্চ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় লোকজন করোনায় আক্রান্ত হলেও যশোরে আক্রান্ত হয় ওই বছরের ১৪ এপ্রিল। এরপর সীমান্ত জেলা যশোরে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। ১৪ এপ্রিল থেকে যশোরে ২১ হাজার ৭শ’ ২৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একজন চিকিৎসক সৈয়দ সাজ্জাদ কামালসহ ৫শ’ ৭ জন মৃত্যুবরণ করেছে করোনায়। অনেক চিকিৎসক সেবিকা ও কর্মচারীও আক্রান্ত হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে গঠন করা হয় প্রতিরোধ কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজিবি, আনসার ও পুলিশের সমন্বয়ে যশোরে করোনা প্রতিরোধে যুদ্ধ ঘোষণা হয়। এ যুদ্ধের সম্মুখসারিতে ছিলেন চিকিৎসক, সেবিকা ও হাসপাতালের কর্মচারী। যাদের চিকিৎসা সেবায় অনেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন। করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকার প্রণোদনার টাকা দিয়েছেন। যশোরে কেউ পেয়েছেন, কেউ পাননি প্রণোদনা সুবিধা। না পাওয়াদের মধ্যে অন্যতম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক, যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (কনসালটেন্ট), মেডিকেল অফিসার, উপজেলা পর্যায়ের মেডিকেল অফিসার, যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের (টিবি হাসপাতালের) চিকিৎসক সেবিকা ও কর্মচারীরা করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের প্রণোদনা দেয়ার জন্যে যশোরে এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে।
সূত্র জানিয়েছেন, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আসে ৩০ লাখ টাকা ২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ৭০ লাখ টাকা। এক কোটি টাকার মধ্যে ৩০ লাখ টাকা পেয়েছেন ১৭ জন জুনিয়র চিকিৎসক, ৯৫ জন সেবিকা ও কিছু কর্মচারী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ প্রণোদনার টাকা পাননি। তাছাড়াও টিবি হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা, কর্মচারীরাও পাননি প্রণোদনা সুবিধা। এ নিয়ে তাদের ভেতর বিরাজ করছে অসন্তোষ ও হতাশা।
সূত্র জানিয়েছেন, এরা প্রণোদনা সুবিধা না পেলেও ৯৫ জন সেবিকা পেয়েছেন দু’দিক দিয়ে সুবিধা। ১৪ দিন করোনা ওয়ার্ড ও করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে। সে মোতাবেক ৯৫ সেবিকা ১৫ দিনে ১ হাজার টাকা করে মোট পেয়েছেন ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
আর বেসিক বেতনের দ্বিগুণ। ৪০ লাখ ২৩ হাজার ৭শ’ টাকা পেয়েছেন। কোভিড-১৯ উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নিয়োগকৃত যে ১৭ জন চিকিৎসক যশোর সিভিল সার্জনের অধীনে দেয়া হয়েছিল তারা মাসে ১৫ দিন ডিউটি করেছেন। সে হিসেবে ১৭ জন চিকিৎসক পেয়েছেন। প্রতিদিন ১ হাজার ৮শ’ টাকা করে ৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এছাড়া কর্মচারীদের ৩ লাখ ৮০ হাজার ২৫০ টাকা দেয়া হয়েছে করোনার প্রণোদনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যাদের করোনা সুবিধা দেয়ার জন্যে নির্বাচিত করেছিলেন কেবল তারাই এ সুবিধা পেয়েছেন।
বাদ পড়েছেন করোনা ওয়ার্ডে (রেড জোন) ও আইসোলেশন ওয়ার্ড (ইয়োলো জোন) দায়িত্ব পালন করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। যার সংখ্যা অনুমান ৩০ জন। আবার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রথমে করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছিল। এ হাসপাতালে ২ জন কনসালটেন্ট, ৭ জন সেবিকা ও ব্রাদার ছিলেন ডিউটিতে। বেসরকারি জিডিএস হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল করা হলেও তারা সেখানেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ, তাদের করোনা প্রণোদনার টাকা দেয়া হয়নি। তারাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতো করোনা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছেন, প্রথমে যে ৩০ লাখ টাকা এসেছিল তা করোনা প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে নিয়ে যায়। পরে আসা ৭০ লাখ টাকার মধ্যে ওই কমিটি নিয়ে যায় ৪০ লাখ টাকা। যা করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়েছে। বাকি ৩০ লাখ টাকা জুনিয়র চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীদের দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের করোনা প্রণোদনা না পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন। তারা প্রণোদনা পেতে পারেন ডা. আক্তারুজ্জামান আরও বলেন, আমি নতুন এসেছি। সে সময় ছিলাম না। যাদের নাম সিলেক্ট করা হয়েছিল কেবল তারাই করোনা সুবিধা পেয়েছে। তবে কতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক করোনার দায়িত্ব পালন করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেননি।
উপ-পরিচালক হিসেবে সদস্য পদোন্নতি পাওয়া যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, তার অধীনে ২১ জন মেডিকেল অফিসার কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালন করেছেন। এর ভেতর করোনা প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছেন ১৭ জন মেডিকেল অফিসার। কোভিড-১৯ উপরক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ওই ১৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। উপজেলা পর্যায়ে যারা করোনায় ডিউটি করেছেন তারা করোনা প্রণোদনার টাকা পাননি।