বৈধ লাইসেন্সের আড়ালে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চট্টগ্রামের বাসিন্দা মো. হোসেনের অস্ত্র ব্যবসার বৈধ লাইসেন্স আছে। চট্টগ্রামে তার একটি দোকানও আছে। কিন্তু তার এই বৈধ ব্যবসা নিয়ে তিনি যতটা চিন্তা করেন তার চেয়ে বেশি চিন্তা করেন অবৈধ অস্ত্র নিয়ে। বৈধ লাইসেন্স নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার বড় বাজার। বৈধ লাইসেন্স ব্যবহার করে তিনি দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে তুলে দিয়েছেন অবৈধ অস্ত্র। পুরাতন অস্ত্র ব্যবহারের লাইসেন্স ব্যবহার করে ওইসব লাইসেন্সে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ করতেন। তবে রেহাই পাননি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কাছে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সিটিটিসি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রি করা একটি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। চক্রটি বৈধ অস্ত্রের দোকানের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে আসছিল। সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান গতকাল মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত রোববার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম যাত্রাবাড়ী থানার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড মোড়ের ৩৩/১ জনপথ মোড়ে শ্যামলী পরিবহনের ছয় নম্বর কাউন্টারের সামনে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অস্ত্র এবং ৩০১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রামের বৈধ অস্ত্রের দোকানের মালিক মো. হোসেন, রাঙ্গামাটির এলাকার পাড়ার হ্যাডম্যান লাল তন পাংখোয়া ও চট্টগ্রাম এলাকার মো. হোসেনের দুই সহযোগী মো. আলী আকবর এবং মো. আদিলুর রহমান।
আসাদুজ্জামান বলেন, মো. হোসেন বৈধ অস্ত্রের একজন ডিলার। তিনি বৈধ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহারের পুরাতন লাইসেন্স সংগ্রহ করতেন। যারা বৈধ অস্ত্র আগে ব্যবহার করতেন কিন্তু এখন তারা আর বেঁচে নেই। আবার অনেকে অস্ত্র আর ব্যবহার করেন না। এসব লাইসেন্স দিয়ে অস্ত্র ক্রয় করে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করতেন। তার কাছ থেকে জব্দ হওয়া শটগানটিও এ রকম একটি লাইসেন্সে কেনা হয়েছে। গ্রেপ্তার লাল তন পাংখোয়ার বাড়ি রাঙ্গামাটির বরকলের সাইচালে। তিনি পাড়ার হেডম্যান ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বরকল সীমান্তবর্তী মিজোরাম রাজ্য এবং বান্দরবানের মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে অস্ত্র গুলি চোরাচালানের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্রি করতেন। মো. হোসেন পাংখোয়া ছাড়াও ঢাকার অস্ত্র ব্যবসায়ী স্বপনসহ বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের থেকে অস্ত্র-গুলি কিনতেন। পরে আকবর এবং আদিলুর রহমান সুজনের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ওই অস্ত্রগুলো সরবরাহ করতেন। গ্রেপ্তারকৃত আদিলুর রহমান সুজন মো. হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তারা দীর্ঘদিন ধরে হোসেনের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র গুলি কিনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। এরা আবার অবৈধ অস্ত্র-গুলি চট্টগ্রামের হামিদুল হক, আবদুল মান্নান আহমেদ সফা কক্সবাজারের সেলিম ও জুয়েলদের কাছে বিক্রি করতেন। সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। তারা কার কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। আমরা রিমান্ডে এনে তাদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করবো। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এই চক্রের বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো। আমরা আশঙ্কা করছি তারা ইতিপূর্বে অনেক অস্ত্র ও গুলি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করেছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা পুনরায় অভিযানের চেষ্টা করবো। আমাদের আরও আশঙ্কা তাদের কাছ থেকে পাওয়া একে-৪৭ এর গুলি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের কাছে অর্ডার করেছিল। এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছি। আমাদের ধারণা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ও কক্সবাজারের বড় কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এত বড় অস্ত্রের চালান নিয়ে আসায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় হুমকি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলে, যে চারজন এসেছে তারা আলাদা আলাদাভাবে এসে এখানে মিলিত হয়েছেন। তবে অবশ্যই এইটা হুমকি তো বটেই। অস্ত্রগুলো হয়তো বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কাজে ব্যবহার হতো। যেটা আমাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতো। তারা কতজনের কাছে এখন পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। দীর্ঘদিন যাবৎ তারা এই ব্যবসা করে আসছে। আমরা সবগুলো বিষয় সামনে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আমরা আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে এসব নাম পাবো। গ্রেপ্তার হওয়া সবাই দেশি নাগরিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। গ্রেপ্তারের সময় অস্ত্রগুলো তাদের ব্যাগে ছিল। তিনজনের কাছে আমরা অস্ত্রগুলো পেয়েছি আরেকজনের কাছে গুলি পেয়েছি।