মানুষ এখনো আতঙ্কিত: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কুমিল্লা পূজামণ্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও মণ্ডপে হামলা হয়েছে। এই ঘটনার পর প্রকৃত কারণ ও ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির এবং মণ্ডপ পরিদর্শন তাদের পাশে দাঁড়াতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে বিএনপি। দায়িত্ব পাওয়ার পর কমিটির সদস্যদের নিয়ে গত শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রংপুর, কুমিল্লা ও চাঁদপুর যান গয়েশ্বর। এসব জায়গা সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে রোববার ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গত ১৩ই অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যদিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ভাঙচুর তাণ্ডব-লুটপাট হয়েছে। মানুষ এখনও আতঙ্কিত। গোপালগঞ্জ শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) ভোট পয়েন্ট, তার নির্বাচনী এলাকা টুঙ্গিপাড়া হিন্দু অধ্যুষিত এলাকারও একটি মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। এখান থেকে অনুমান করা যায়, সরকার বড় স্পর্শকাতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যদিয়ে জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে সরানো এবং তার স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী মনোভাব দিয়ে তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার একটা হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত। বিএনপির এই নেতা বলেন, কুমিল্লার চাঁন্দমনি রক্ষা কালী মন্দিরে গত ১৩ অক্টোবর দুপুর আড়াইটায় একদিনে তিন দফা আক্রমণ করেছে। নানুয়া দীঘির পাড়ের ঘটনা হল সকালে। সেখানে (চাঁন্দমনি রক্ষা কালী মন্দির) আক্রমণ করার পরে স্থানীয় লোকজন যে যেভাবে পারছে আত্মরক্ষা করেছে। পুলিশ এসে বলেছে, আপনারা ভয় পাবেন না, আমরা আছি। উনারা চলে যাওয়ার পর আবার তিনটায় আক্রমণ হয়েছে। একইভাবে আক্রমণকারীরা চলে যাওয়ার পরে পুলিশ এসেছে। এসে বলল, আমরা আছি আপনারা ভয় পাবেন না। আবার বিকাল চারটায় আক্রমণ হয়েছে। একটা মন্দিরে তিনবার আক্রমণ হয়েছে এবং আগুন দেয়া হয়েছে।
গয়েশ্বর বলেন, মন্দিরে পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলছি। কারণ, আমার ধারণা সরকার অথবা স্থানীয় প্রশাসন থেকে তাদেরকে নিশ্চয় কোনো হুমকি-টুমকি দেয়ার কারণে মন্দিরের কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ কেউ উপস্থিত হননি। এটা স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায়। আশপাশের দোকানদার আছে তাদেরকে আমরা ডেকে তাদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। মন্দিরে আগুন দিয়েছে কোনো প্রাণহানি ঘটে নাই। তবে বিরাজমান আতঙ্কটা এখনো তাদের মন থেকে মুছে যায়নি। একটা নীরব নিস্তব্ধ মানে দিনের বেলাও গা শিরশির করে উঠে। চারদিকে মানুষের চোখে মুখে একটা আতঙ্কে ছাপ দেখেছি। কোনো কথাই তারা বলতে চায় না। কারণ তাদেরও জীবন আছে ভয় থাকতেই পারে যদি কথাগুলো প্রকাশ করে। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমে রাত ৮ টার দিকে তিন শতাধিক মহিলা ভক্ত অবস্থান করছিলেন। ওই সময়ে ৬০/৭০ জন দুষ্কৃতিকারী মন্দিরে আক্রমণ চালায়। একদল ছাত্র প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ২০/৩০ মিনিট প্রতিমাসহ মন্দিরের অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। হামলায় বিকাশ নামে একজন ছাত্র গুরুতর আহত হয়। হামলাকারীদের সবার বয়স ১৯/২০ বছরের মতো। তিনি বলেন, শ্রী শ্রী রাজা লক্ষী নারায়ণ জিউ আখড়ায় ১৩ অক্টোবর দুপুরে ১০০/১২০ জন দুষ্কৃতিকারী হামলা করে। এলাকাবাসী হামলাকারীদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। হামলাকারীরা আখড়ার ভেতরে প্রবেশ করে প্রায় ২/৩ ঘন্টা প্রতিমাসহ মন্দিরের অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা এলাকাবাসীর কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হামলাকারী সবার বয়স ২০/২৫ বছরের মতো হবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নোয়াখালীর চৌমহনী একটি বাণিজ্যিক এলাকা। সেখানে পরপর আটটি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। গচ্ছিত টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুটপাটসহ সেখানে ক্ষতির পরিমান ৭/৮ কোটি টাকার সম্পদ। এখনো নোয়াখালীর চৌমহনীতে আমরা যেতে পারিনি। নানা শঙ্কা থাকলেও সেখানে যাব। তবে, সেখানকার জনপ্রিয় সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু এখানে আছেন। তার সঙ্গে সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পর্কটা অনেকটা পারিবারিক। ঘটনার দিন বুলুর নির্দেশে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে মন্দিরে হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিল আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা। কিন্তু তাদের নামেও মামলা দেয়া হয়েছে। ২৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বরকতউল্লাহ বুলুকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত অনেক। এই অজ্ঞাত মানে পুলিশের বাণিজ্য করে দেওয়ার সুযোগ। মন্দিরের এসব হামলা সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে হলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষকে টার্গেট করে মামলা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, এটি আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ষড়যন্ত্র। আমরা সরজমিন মন্দিরে গিয়ে সকলের সাথে কথা বলেছি, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামত শুনেছি। সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, এইসব হামলার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুব লীগ, ছাত্রলীগের ছেলে- পেলেরা এবং সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের কাছেও ধারনা আছে।
গয়েশ্বর বলেন,স্পর্শকাতর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্য দিয়ে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরাতে ও ক্ষমতা দীর্ঘ করার হীনচেষ্টায় লিপ্ত সরকার। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা লালন করে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জনান তিনি। গয়েশ্বর বলেন, হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করার কোনও উদ্যোগ নেই সরকারের। বরং বিভিন্ন মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষকে হয়রানি করার নীলনকশা। তিনি বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে এই ঘটনা ঘটেছে। গয়েশ্বর আরো বলেন, মন্দিরে আগুন ভাংচুরের ঘটনায় এখনো আতঙ্ক কাটেনি। প্রশাসন গুরুত্ব না দেয়ায় ৬-৭ ঘন্টাব্যপী তান্ডব চালায় দুষ্কৃতকারীরা। এখনো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর হচ্ছে।