খুনিরা যেন বারবার রক্ষা না পান

0

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। কথায় কথায় খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। ডাকাতি, ছিনতাই, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, গোষ্ঠী দ্বন্দ্বসহ আরো অনেক কারণেই বাড়ছে খুনাখুনি। সম্প্রতি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে স্থানীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা। গত শুক্রবার মাগুরা সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই সদস্য পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। একই ধরনের সহিংসতার খবর আসছে আরো অনেক স্থান থেকে। পাশাপাশি রয়েছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ। ওই শুক্রবার রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ২৫টি বাড়ি। পারিবারিক বিরোধে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। আর এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে পরিবারেরই আরেক সদস্যকে। পত্রিকার পাতা খুললে প্রতিদিনই এমন অনেক হত্যাকাণ্ডের খবর চোখে পড়ে।
মাগুরার ঘটনায় বিলম্বে মামলা হয়েছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, জগদল ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুই সদস্য পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মোল্লা ও সৈয়দ হাসানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতরা হলেন—রহমান মোল্লা (৫৫), সবুর মোল্লা (৫২), কবির মোল্লা (৫০) এবং ইমরান হোসেন (২৫)। এর মধ্যে সবুর মোল্লা ও কবির মোল্লা দুই ভাই। তাঁদের গলা কেটে হত্যা করা হয়। অন্যদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত সবুর মোল্লার পরিবারের লোকজন জানায়, চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে নজরুল মোল্লা ও তাঁর সমর্থকরা সবুর মোল্লাকে হত্যা করেছে। জানা যায়, মোল্লা গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ২০০৩ সালেও তিনজন খুন হয়েছিলেন। পরে ঘটনাটি দুই পক্ষ মীমাংসা করে নেয়। সেই খুনেরও অভিযোগ ছিল নজরুল মোল্লার বিরুদ্ধে। তখন তিনি স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ক্ষমতাস্থলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকায় তিনি খুবই প্রভাবশালী। নিহতদের পরিবার হয়তো শেষ পর্যন্ত আবারও আপসরফায় যেতে বাধ্য হবে। স্থানীয়রা বলছেন, আগের হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে আবার হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা হয়তো ঘটত না। তাঁরা উভয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন।
সংঘটিত অপরাধের বিচার না হলে, অপরাধীরা দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পেলে অপরাধ ক্রমে বাড়তে থাকে। অপরাধীরা আরো বড় অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হয়। আর তারই প্রমাণ তুচ্ছ ঘটনায় খুনাখুনি পর্যন্ত চলে যাওয়া। কিশোররাও এখন খুনাখুনিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। নৃশংস অপরাধের এমন দ্রুত বিস্তারে সমাজে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তাবোধ বিঘিœত হচ্ছে। এই ভয়ংকর প্রবণতা এখনই রোধ করা না গেলে সমাজ ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। আর যারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয় কাজে লাগিয়ে অপরাধ করে তাদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকেও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই, হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। খুনিরা বারবার রক্ষা পেলে খুন খারাবী বাড়বেই।