এবার রংপুরে হিন্দুপাড়ায় আগুন, আটক ২০

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফেসবুকে এক হিন্দু কিশোরের পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরের পীরগঞ্জে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পবিত্র কাবা শরীফের অবমাননাকর ছবি পোস্ট করায় জেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের উত্তর করিমপুর কসবা মাঝিপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ২০ জনকে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, ফেসবুকে পবিত্র কাবাঘরের অবমাননাকর পোস্টটি দেয় রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের প্রসেনজিত রায়ের ছেলে পরিতোষ রায়। ঘটনাটি পীরগঞ্জ থানায় জানিয়ে পরিতোষকে গ্রেফতারের দাবি করে স্থানীয়রা। এ নিয়ে রোববার বিকেল থেকে উত্তেজনা চলছিল ওই এলাকায়। থানা পুলিশ সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পৌর মেয়র, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ পরিতোষের বাড়িতে অবস্থান নেয়। বিক্ষুব্ধ জনতাও ঘিরে ফেলে বাড়িটি। এর আগেই সপরিবারে পালিয়ে যায় পরিতোষ। রাত ৯টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তার বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দুরে করিমপুর-কসবা-মাঝিপাড়া এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ির সামনে এবং রাস্তার ধারের অনেক খড়ের পিলেও দেয়া হয় আগুন। ১৮টি ঘর ও একটি দোকানে দেয়া হয় আগুন। এতে পুড়ে যায় সুমতি রানীর গরু, প্রদীপ চন্দ্রের ভ্যানসহ থাকার ঘর। পুড়ে যায় নিখিলের দোকান। অনেক বাড়িতে চালানো হয় ভাঙচুর। লুট হয় গরু, ঘরের আসবাবপত্রসহ মালামাল। আতঙ্কে নারী ও পুরুষ অনেকেই আশ্রয় নেন পাশের ধানক্ষেতসহ বিভিন্ন জায়গায়। ভাঙচুর করা হয় মন্দিরের প্রতিমাও।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে ফাঁকা গুলি ও রাবারবুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। রাত ১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে রাতভর সেখানে উপস্থিত থাকেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ। আটক করা হয়েছে ২০ জনকে। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সকালে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য। এছাড়াও এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। রংপুর পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, পরিতোষ সরকার নামের ১৫-১৬ বছরের একটি ছেলে ফেসবুকে একটি অত্যন্ত বাজে স্ট্যাটাস পোস্ট দিয়েছিল। সেই পোস্টটিকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যার পরপর অসংখ্য লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং পরিতোষের বাড়ি আক্রমণের জন্য সমবেত হতে থাকে। এই খবর পাওয়া মাত্রই ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্স এবং ইউএনও’র নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন সেখানে যায। আমরা খবর পেয়ে ফোর্স পাঠিয়েছি এবং খবর পেয়ে ডিসি সাহেবসহ অন্যান্যরা এসেছেন। তখন আমরা সবাই মিলে পরিতোষের বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। মূল আক্রমণের স্থল পরিতোষের বাড়ি আমরা রক্ষা করতে পেরেছি। কিন্তু পরবর্তীতে পেছন দিক থেকে আমরা কিছু নাম পেয়েছি, প্রায় ২০ জনের মতো অ্যারেস্টও করেছি। তারা এসে আশেপাশের দুরবর্তী যে গ্রামগুলো রয়েছে, সেখানে বিনা উস্কানিতে কিছু মানুষের বাড়িঘরে হামলা চালায়, গবাদিপশু লুটপাট করেছে অগ্নিসংযোগ করেছে, বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। মন্দিরে প্রতিমাও ভাঙচুর করেছে। এটি পরিতোষের বাড়ি থেকে অনেক দূরে আধ-এক কিলোমিটার দূরে। এতে বোঝা যায় এটি একেবারেই সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে করেছে।
তিনি আরো বলেন, তারা তো কোনো অন্যায় করেনি। যদি কোনো অন্যায় করে থাকে সেটা পরিতোষ করেছে। এবং পরিতোষকে গ্রেফতারের জন্য যত ধরনের আইনী প্রক্রিয়া রয়েছে, সেসব ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি। সেটি এখনো চলমান রয়েছে। কিন্তু তারা পরিতোষের বাড়িতে কিছু না করে নিরীহ মানুষ ও মন্দিরে আক্রমণটা করেছে। এ ঘটনাটিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এবং এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত, এক পরিতোষ যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার বিচার এক ধরনের, আর যারা নৃশংসতা করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, সহিংসতা করেছে, তারা কেউ প্রশাসনের হাত থেকে রেহাই পাবে না। কতুটুকু ক্ষতি হয়েছে সেটি জেলা প্রশাসন খতিয়ে দেখছে আমরা খতিয়ে দেখছি। এই ঘটনার পেছনে কে বা কারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করেছি। যেহেতু এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজমান। সেকারণে আমরা এলাকায় শান্তি ফেরানোর ওপরও জোড় দিচ্ছি। আর যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরকে আমরা ইন্টারগেট করবো। এ ঘটনার সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তারা যতই শক্তিশালী হোক না কেন যত ধরনের প্রচেস্টা সেগুলো আমরা করছি। পীরগঞ্জে যারা এই নৃসংস ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। তিনি বলেন, পরিতোষকে আমরা খুঁজছি। সে যেখানেই থাকুক আইনের হাতে তাকে আসতেই হবে। রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, আমাদের এখানে যে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের জন্য রাতেই আমরা শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি তাদের রান্না করা খাবারও বিতরণ করেছি। তাদের যে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য যেটা প্রয়োজন হবে সেটাও আমরা সকাল থেকে শুরু করেছি। সরকারি সকল সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য দেয়া হবে।