স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার চেষ্টার অভিযোগে যবিপ্রবি কর্মকর্তাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যৌতুক দাবি, গর্ভের সন্তান হত্যার চেষ্টা এবং স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এর সেকশন অফিসার বিপ্লব হোসেনের বিরুদ্ধে রোববার আদালতে মামলা হয়েছে। স্ত্রী সুমাইয়া ইয়াসমিন মামলাটি করেছেন। এই মামলায় যবিপ্রবি’র অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসানসহ আরো ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত বিপ্লব হোসেন সদর উপজেলার হালসা গ্রামের আবু মুছার ছেলে। অপর আসামিরা হলেন-বিপ্লব হোসেনের পিতা আবু মুছা, মা নুর নাহার বেগম, বোন নওশিন শারমিলি বিভা, শহরের পুলিশ লাইনস পাওয়ার হাউস পাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে ফারুক হোসেন হাওলাদার এবং যবিপ্রবি’র অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান।
সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া ইয়াসমিন মামলায় উল্লেখ করেছেন, আসামি বিপ্লব হোসেন যবিপ্রবি’র সেকশন অফিসার এবং গ্রেড-২ রেজিস্ট্রার শাখায় কর্মরত। তার সাথে প্রথমে পরিচয় এবং পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে বিপ্লব হোসেন ভুয়া একজন হুজুরের মাধ্যমে তাকে বিয়ে করেন, যা পরে সুমাইয়া ইয়াসমিন জানতে পারেন। বিয়ের পর বিপ্লব হোসেন স্ত্রী সুমাইয়া ইয়াসমিনকে কুয়াকাটায় নিয়ে যান হানিমুনে। সেখান থেকে ফিরে আসার পর সুমাইয়া ইয়াসমিন তাকে বাড়িতে নিয়ে ঘর সংসার করার জন্য বিপ্লব হোসেনকে বলেন। কিন্তু বিপ্লব এ সময় তাদের বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। এর প্রেক্ষিতে সুমাইয়া আদালতে তার বিরুদ্ধে নালিশি অভিযোগ দায়ের করেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ ওই সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টি জানতে পারে। এ কারণে চাকরি বাঁচানোর জন্য ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর বিপ্লব হোসেনের মা ও পিতা ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে ছেলের সাথে সুমাইয়া ইয়াসমিনের সাথে বিয়ে করিয়ে দেন। ঘর সংসার করাকালে সুমাইয়া অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে আসামিরা ভুল বুঝিয়ে ঠা-াজনিত রোগের কথা বলে তাকে বাচ্চা নষ্ট করার ওষুধ খাইয়ে দেন। ফলে ২ মাসের ভ্রুণ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও তারা ক্ষ্যান্ত হননি। বাড়ির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা বলে তার কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। যৌতুকের জন্য সুমাইয়াকে অত্যাচার, নির্যাতন করা হতো। আবার এরই মধ্যে সুমাইয়া ইয়াসমিন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। গর্ভের এই সন্তান নষ্ট করার জন্য আসামিরা তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। সুমাইয়া ইয়াসমিন যৌতুকের ২ লাখ টাকা এনে দিতে এবং গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে অস্বীকার করলে গত ৯ অক্টোবর রাত আটটার দিকে অন্য আসামিদের উপস্থিতিতে বিপ্লব হোসেন তার তলপেটে ঘুষি মারেন। তার চুলের মুঠি ধরে ঘরের দেওয়ালের সাথে আঘাত করেন এবং জোর করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার ওষুধ খাইয়ে দেন। সেখানে উপস্থিত আসামি কামরুল হাসান এ সময় নিজেকে পুলিশ সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে সুমাইয়ার ডাক চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে রক্ষার চেষ্টা চালালে আসামিরা তাদেরও মারধর করেন। তখন খবর পেয়ে সুমাইয়ার মা জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার পর সুমাইয়া ইয়াসমিন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।