পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর : উসকানিদাতা শনাক্ত, হোতাদের খুঁজছে পুলিশ

0

নুরুজ্জামান লাবু॥ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিন শতাধিক উসকানিদাতাকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের বিভিন্ন ইউনিট তথ্য সংগ্রহ করে একটি তালিকা বানিয়েছে। এটি ধরে উসকানিদাতাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে পুরো ঘটনার মদতদাতাদের খুঁজছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মন্তব্য, দেশকে অস্থিতিশীল করতেই পরিকল্পিতভাবে পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। একটি পক্ষ নেপথ্যে থেকে সাধারণ মুসল্লিদের উসকানি দিয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রবিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় দুই-তিন জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিনষ্ট করতেই সেখানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে একটি পক্ষ। তদন্ত করে শিগগিরই দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’ কুমিল্লাসহ সারাদেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। এটি কারা ঘটিয়েছে তা তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, কুমিল্লার ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। কারণ, কোনোভাবেই পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার কথা নয়। রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতকারীরা পূজামণ্ডপে কোরআন রেখে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারাই সকালে সেটি প্রচার করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক তথ্য দিয়ে পুরো দেশেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর অপচেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতকারীরা।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, কুমিল্লার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ফয়েজ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া গোলাম মাওলা নামে আরেক তরুণকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পুরো ঘটনার মদতদাতাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ সদর দফতরের সূত্র বলছে, সারাদেশে পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ১৪টি মামলায় প্রায় চার হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তি ধরা পড়েছে। তবে পুলিশের একজন কর্মকর্তার দাবি, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা প্রায় সবাই হামলায় অংশ নিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু অনেককেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উসকানি দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছিল। সদর দফতরের সূত্র জানায়, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশের পাশাপাশি সব ইউনিটের চৌকস কর্মকর্তাদের তদন্তে সহায়তা করার বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সাইবার পুলিশ সেন্টার একযোগে কাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কুমিল্লার ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দৃষ্কৃতকারীরা প্রথমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়। একইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসার কথা বলে উত্তেজিত করে তোলে। অনলাইন ও অন্যান্যভাবে উসকানিদাতাদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদের ভাষ্য, ‘আমরা পরিকল্পনাকারী ও নেপথ্যের মদতদাতাদের গ্রেফতারে কাজ করছি। পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে। শিগগিরই এই বিষয়ে ভালো খবর পাওয়া যাবে।’ সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি চক্র কুমিল্লাকে লক্ষ্য বানায়। কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে অন্য এলাকাগুলোতে ঘটনা দেখা দিয়েছে। মূল পরিকল্পনাকারীরা কুমিল্লায় ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়ে অন্য এলাকাগুলোতে উসকানি দেওয়ার কাজ করেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় এই ঘটনার নিবিড় তদন্ত চলছে। যেকোনও মূল্যে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হবে।’ ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, কুমিল্লার ঘটনাটি দুষ্কৃতকারীরা টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছিল বলে এখন পর্যন্ত তারা ধারণা করছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপচেষ্টা হতে পারে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এসব গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কাজ করছেন।