ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিল

0

বিশেষ প্রতিবেদক॥ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) হচ্ছে না ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের প্রস্তাব ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ সিসিইএ সভায় অনুমোদন পরবর্তী সমীক্ষা পরিচালনা এবং বিশদ নকশা প্রণয়ন করা হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ না করে বিদ্যমান ৪-লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্তকরণ এবং উভয়পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ প্রেক্ষাপটে, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে নির্মাণের কার্যক্রম বাতিলের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে।
জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য সমীক্ষা পরিচালনা এবং বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েটিতে সার্ভিস লাইন না থাকায় ভবিষ্যতে ট্রাফিক জ্যাম বাড়তে পারে। এজন্য মহাসড়কের দুই পাশেই সার্ভিস লাইন নির্মাণ করা হবে। এতে স্থানীয় যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের ফলে অর্থের অপচয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অর্থ সরকারি কোষাগারের, দাতা সংস্থার নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার বৃহত্তর স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ব্যবহারের জন্য প্রতিস্থাপক হিসেবে ৫০টি গাড়ি ক্রয়ের লক্ষ্যে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর কর্তৃক ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের সরকারি ও দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য জিপ গাড়ি ক্রয় করে বরাদ্দ দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, পুরাতন জিপগুলো আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় মেরামত করে প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় গতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিস্থাপক হিসেবে ৫০টি জিপ গাড়ি উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় সাপেক্ষ বিধায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জন্য ৫০টি মিৎসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউ এক্স জিপ গাড়ি সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ থেকে পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮(১) ধারা এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গাড়ির দাম ৯৪ লাখ টাকা হিসেবে ৫০টি গাড়ির মোট দাম ৪৭ কোটি টাকা। তিনি বলেন, হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু-বনশ্রী-শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক পিপিপি ভিত্তিতে ৪-লেনে উন্নীত করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় বর্ণিত পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগকারী হিসেবে যৌথভাবে সিসিসিসিএল এবং সিআরবিসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের অধীনে ৪-লেন সড়কটি মোট ১৩.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ৯.৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এবং ৪ কিলোমিটার এ্যাট গ্রেড। প্রকল্পটির সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৪ কোটি ১ লাখ টাকা। প্রকল্পের ইআইআরআর ২২.৩ শতাংশ এবং বেনিফিট কস্ট অনুপাত ৪.৩৪ শতাংশ। সওজ এবং বিনিয়োগকারীর মধ্যে চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর। নির্মাণকাল ৪ বছর শেষে অবশিষ্ট ২১ বছর সড়ক র্নিমাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য বেইজ অ্যাভিবিলিটি পেমেন্ট হিসেবে প্রকল্প কোম্পানিকে প্রতি ৬ মাস অন্তর ১০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা দিবে। প্রকল্প কোম্পানি সড়ক থেকে টোল সংগ্রহ করে সব অর্থ সওজকে দেবে। কিন্তু বিজ্ঞাপন হতে প্রাপ্ত রাজস্ব ৫০ শতাংশ-৫০শতাংশ ভিত্তিতে সওজকে দেবে।
সভায় কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে টিকাদানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১৩ কোটি ৮২ লাখ লোককে টিকাদানের লক্ষ্যে ২৭ কোটি ৬৪ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য ২৭ কোটি ৬৪ লাখ সিরিঞ্জ প্রয়োজন। প্রতি মাসে ২ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যে ৯ কোটি ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ জরুরি ভিত্তিতে ক্রয় করতে হবে। এ অবস্থায়, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) এবং পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রস্তাবিত ৯ কোটি এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউিটিক‌্যালস ফরেন ট্রেড করপোরেশন থেকে কেনা হবে। প্রতি সিরিঞ্জের দাম পড়বে হবে ৩.৪২ টাকা।