চৌগাছা হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণপদে নেই ডাক্তার, ৭৭ পদ শূন্য: কর্তব্যরতরা স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালে গুরুত্বপূর্নপদে নেই ডাক্তার। কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ৭৭ জনের পদ রয়েছে খালি। ফলে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্স। ২০৯ জনের মুঞ্জুরী পদের বিপরীতে জনবল আছে মাত্র ১৩২ জন। এদের মধ্যে ডাক্তার ১২ জন, ২য় শ্রেণী ১০ জন, ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী ৩৪ জন ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ১২ জনের পদে কোন লোক নেই। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফুন্নাহার লাকি জানান, হাসপাতালটিতে এ্যানেসথেসিস্ট, কনসালটেন্ট সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী, কাডিও, কনসালটেন্ট চক্ষু, ইএনটি, জুনিয়ার কনসালটেন্ট চর্ম ও যৌন, মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জন, এ্যানেসথেসিস্টসহ কোন ডাক্তার নেই। নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসারও। ফলে সেবার মান ধরে রাখতে দারুন ভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরত চিকিৎসদের। রীতিমত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী সাধারণ।
শনিবার সরেজমিনে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে গুরুত্বপূর্ন পদগুলোতে ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফাটা, কাটা, ছোটখাট রোগীসহ প্রসূতি মায়েদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঔষধ কাউন্টারে জনবল কম থাকায় সেখানেও দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বৃদ্ধ, শিশু ও প্রসূতি মায়েদের। ফলে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার মা, শিশু ও সাধারণ রোগীরা। তাই স্বাস্থ্যসেবাই বাংলাদেশের মডেল চৌগাছা হাসপাতালের সেই মডেল কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে দারুণ ভাবে। চিকিৎসা সেবাই মডেল হওয়ায় পার্শ্ববর্তী কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, ঝিকরগাছা, কালিগঞ্জ, র্শাশা ও যশোর সদর উপজেলার প্রসূতি মা, শিশুসহ সাধারণ রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। এছাড়া সেবার মান ধরে রাখার মূল চালিকাশক্তি তৃতীয় শ্রেণীর বিভিন্ন পদে ৩৯ জন, চতুর্থ শ্রেণীর ১৫ জন, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার কর্মী ১ জন, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১০ জনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে মোট ৭৭ জন জনবল দীর্ঘদিন যাবৎ শূণ্য রয়েছে। ফলে জনবলের তুলনায় রোগী বেশী হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরা।
এদিকে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার মৃদুল কান্তিকে পদায়ন দেখালেও তিনি ২০১৪ সাল থেকে কোন দিন কর্মস্থলে আসেন না। ফুলসারা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডাঃ হাদিউর রহমানকে পদায়ন দেখালেও তিনিও কর্মস্থলে আসেন না। নারায়নপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার নিশাত নাজনিনকে পদায়ন দেখালেও তিনি কোন দিন কর্মস্থলে আসেন না। এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার স্বরুপদহ গ্রামের সালমা খাতুন বলেন, আমার অসুস্থ্য পিতা সামাউল ইসলাম (৬৫) কে নিয়ে সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসেছি। টিকিট নিতে লাইনে দাড়িয়ে ১১ টার দিকে টিকিট পেয়েছি। ডাক্তারের সামনে গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম ১২.৩০ পর্যন্ত এখন ১২ টা ৪৫ বাজে ঔষধ নিতে লাইনে দাড়িয়ে রয়েছি। আমার শরীরও খুব খারাপ আর দাড়াতে পারছি না। এ সময় লাইনে দাড়িয়ে থাকা অনেকে বলেন, ডাক্তার নেই তাই রোগীূর লাইন দীর্ঘ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা মডেল হাসপাতালটি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় পর পর ১৭ বার সারা বাংলাদেশের মধ্যে ১ম স্থান অধিকার করেছে। চৌগাছা হাসপাতালটি স্বাস্থ্য সেবায় সারা দেশের মডেল হিসাবে খ্যাতি অর্জন করায় বর্তমানে মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, ঝিকরগাছা, কালিগঞ্জ, যশোর সদরসহ বিভিন্ন জেলার জটিল রোগীরা বিশেষ করে মা ও শিশু রোগীরা এই মডেল হাসপাতাটিতে সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন আউটডোর ও ইনডোরে প্রায় ৫’শ থেকে ৬ শ রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। এদিকে জনবল না থাকায় তাদের যথাযথ সেবা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ১১ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ডাক্তার ও মাঠ কর্মী না থাকায় গ্রাম এলাকার মা ও শিশুসহ সব ধরনের রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়াই পৌঁছিয়ে দিতে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক। কিন্তু ডাক্তার, স্বাস্থ্যসহকারী ও মাঠ কর্মী না থাকায় সেগুলো সরকার ও জন সাধারনের কোন কাজে আসছে না। এদিকে সেবার মান ধরে রাখতে স্থানীয় ভাবে এ হাসপাতালে লোকাল জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে করোনার কারণে যার বেশির ভাগ লোক অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মডেল হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি জানান, এসব শুন্য পদের জনবল চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আমরা বার বার আবেদন করেছি। জনবলের তুলনায় রোগী অনেক বেশি তাই একজন ডাক্তারকে আউটডোরে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১শ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। ইনডোরে প্রতিদিন ১শ থেকে দেড়শত রোগী ভর্তি থাকে। বিশেষ করে যে বিভাগটির জন্য আমরা মডেল হয়েছি সেই প্রসূতি বিভাগে এ্যানেসথেসিস্ট, কোন ডাক্তার নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ গুরুত্বপূর্ন পদে ডাক্তার ও কর্মচারী সংকটের ফলে সেবারমান ধরে রাখতে দারুণ ভাবে হিশশিম খেতে হচ্ছে। যে তিন জন চিকিৎসক দীর্ঘদিন কর্মস্থলে আসে না তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন,এক জন যশোর ২৫০ শয্যায়, একজন কেশবপুর ও অন্য জন দেশের বাইরে আছেন।