বাগেরহাটের রামপাল-মোংলার নদ-নদীগুলো প্রায় মৎস্যশূন্য

0

এম. এ সবুর রানা, রামপাল (বাগেরহাট) ॥ বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা রামপাল ও মোংলার নদ-নদীগুলো প্রায় মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে তদারকির অভাব, অসচেতনতা ও অসাধু মৎস্য শিকারীদের কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সুন্দরবনের নদী-খালে বিষ প্রয়োগ, নেট-পাটা, কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে রেণু পোনা নিধন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, কলকারখানা ও মোংলা বন্দরের জাহাজ থেকে ফেলা বিষাক্ত বর্জ্য এবং মাছের অভয়াশ্রম তীব্রভাবে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ার কারণে উপকূলীয় দুই উপজেলা রামপাল ও মোংলার আন্তঃনদী এবং খাল মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবন দপ্তর ও মৎস্য দপ্তরের সমন্বয়হীনতার অভাবে মাছের এই ভরা মৌসুমেও নদী-খালের কোথাও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। জানা গেছে, জোয়ার-ভাটা প্রবণ এই দুই উপজেলায় কয়েক হাজার হেক্টর নদী, খাল প্লাবনভূমি ও জলাভূমি রয়েছে। বর্তমানে উপজেলা দুটিতে চাষকৃত ও সামুদ্রিক মাছ দিয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে।
সিংগড়বুনিয়া গ্রামের বৃদ্ধ মুজিবর মোল্লা জানান, ‘৩০/৪০ বছর আগে এই রামপাল ও দাউদখালী গাঙ্গে ভরপুর মাছ ছিলো। এখন গাঙ্গে কোন মাছ নেই। সারাদিন জাল ফেলেও মাছ পাই না।’ একই কথা বলেন শ্রীফলতলা গ্রামের কালাম শেখ। তিনি জানান, ‘সারাদিন নদীতে জাল টেনেও একশ’ টাকার মাছ পাচ্ছিনা। ৫/৬ জনের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে মাছ ধরা ছেড়ে অন্য পেশায় চরে গেছে।’ কেন নদী ও খালে মাছ কমে গেল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, নেট (জাল) দিয়ে মাছের ডিম ও পোনা মেরে নষ্ট করার কারণে মাছ শেষ হয়ে গেছে। তারা জানান, একটি বাগদা বা গলদার রেণু পোনা ধরতে গিয়ে শত শত মাছের ডিম ও রেণু পোনা মেরে ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মোংলা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. নূর আলম বলেন, শিল্প বর্জ্য দূষণ, প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণ, মোংলা বন্দরে তেলের জাহাজ ও কয়লার জাহাজ ডুবি, সুন্দরবনে নির্বিচারে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার, মাছের প্রজনন আধার সঙ্কুচিত হওয়া, প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ নষ্ট করে ফেলা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি, নদ-নদীর নাব্যতা সঙ্কটে মিষ্টি পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উপকূলীয় ওই দুই উপজেলায় আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, নদীতে নাব্যতা সঙ্কট। ¯্রােত নেই, ইলিশ নেই। দেখারও কেউ নেই। সুন্দরবনের ৫১ ভাগ বনভূমিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল করা হয়েছে। ওই সব বনে একশ্রেণির অসাধু জেলে নির্বিচারে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। বন বিভাগের নজরদারি, তদারকির অভাবে মৎস্য নিধন ঠেকানো যাচ্ছে না। আর ওই বিষাক্ত পানির প্রবাহ উপকূলের নদ-নদীতে প্রবেশের কারণে মৎস্যের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও পরিবেশ না থাকার কারণে ইলিশসহ অনেক মাছ এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে রামপাল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসাদুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন কারণে মৎস্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমিষের চাহিদা পূরণে মৎস্য চাষ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তিনি বলেন, নদী দূষণ বন্ধ, নাব্যতা বৃদ্ধি, প্লাবন ভূমির পানি প্রবাহ বৃদ্ধি, মৎস্যের অভয়াশ্রম বৃদ্ধিসহ সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা মুক্ত করতে হবে। নদীর নব্যতা সৃষ্টি করতে পারলে আগের মত ইলিশসহ সকল প্রকার মৎস্য বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।