খুলনা ও যশোরে দুই জনের ফাঁসি ও নড়াইলে দুই জনের যাবজ্জীবন দণ্ড

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ খুলনায় আলোচিত কোকেন মামলায় ও যশোরে স্ত্রী হত্যা মামলায় দুই জনের ফাঁসি এবং ওই কোকেন মামলায় আরও এক জনকে আমৃত্যুসহ পাঁচ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড ও নড়াইলে দুই মাদক ব্যবসায়ীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত।
গতকাল বুহস্পতিবার স্ব-স্ব জেলার আদালত উল্লিখিত রায় ঘোষণা করেন। স্টাফ রিপোর্টার ও সংবাদদাতাদের বিস্তারিত প্রতিবেদন-


স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা জানান, চাঞ্চল্যকর সাড়ে ২২ কোটি টাকার কোকেন উদ্ধারের মামলায় এক জনকে মৃত্যুদণ্ড ও অপর এক জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার অপর চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় সকল আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ে আসামি বিকাশ চন্দ্র্র বিশ্বাসকে গলায় ফারায় ঘোষণার পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এনামুল হক সাংবাদিকদের এ সম্পর্কে অবহিত করেন। আদালত সূত্র জানান, ২০১৭ সালের ১১ আগস্ট রাত পৌনে ১০ টার দিকে র‌্যাব-৬ খুলনার একটি দল নগরীর হাদিস পার্কের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় ওই দলটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে ময়লাপোতা মোড়ের পাশে একটি চক্র মাদক বিকিকিনি করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে তারা সেখানে পৌঁছালে কয়েকজন লোক পালানোর চেষ্টা করে। সঙ্গীয় ফোর্সের সহায়তায় সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তিকে আটক করতে সক্ষম হন র‌্যাব কর্মকর্তারা। পালানোর কারণ জানতে চাইলে সোহেল জানায়, তার কাছে কোকেন আছে। র‌্যাব কর্মকর্তারা সেখান থেকে ২শ’ ৩০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করে। যার অনুমানিক মূল্য দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। সোহেলের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গগনবাবু রোডের একটি বাড়ি থেকে আরিফুরকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মোতাবেক দাকোপ উপজেলায় রাত তিনটার দিকে অভিযান চালিয়ে বিকাশ চন্দ্র মন্ডল ও ফজলুর রহমান ফকিরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী টুটপাড়ায় অভিযান চালিয়ে এস এম এরশাদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রূপসা উপজেলার রাজাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হলে তিনটি কোকেনের প্যাকেট বের করে দেয় সে। যার মধ্যে দুই কেজি ২০ গ্রাম কোকেন পাওয়া যায়। সোয়া দুই কেজি কোকেনের মূল্য ২২ কেটি ৫০ লাখ টাকা। এ ঘটনায় র‌্যাব-৬ এর ডিএডি মোঃ রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ছয় জনের নাম উল্লেখ করে রূপসা থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৮, ধারা-১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর টেবিল ১(খ)/২৫। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন র‌্যাবের সিনিয়র এএসপি মো: বজলুর রশিদ। দীর্ঘ ৫ বছর যাবত বিচারকার্য পরিচালনার পর সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করে।


যশোরে স্ত্রীর মুখে গামছা ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামী মনিরুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন সিনিয়র দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো.ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রিস আলী। সরকারি কৌঁঁসুলী জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত মনিরুল ইসলাম বাঘারপাড়া উপজেলার ভাতুড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার বিবরণ থেকে অ্যাড.ইদ্রিস জানিয়েছেন, ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে মনিরুল তার স্ত্রী তারা বেগমকে মুখের মধ্যে গামছা দিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর প্রচার করেন স্ত্রী বাড়ি থেকে চলে গেছেন। এ ঘটনার ২৫ দিন পর ৮ অক্টোবর তারা বেগমের মা সবুরা খাতুন জামাই বাড়িতে এসে নাতি ছেলে ( নিহত তারা বেগমের ছেলে) আবু হুরাইরার কাছে জানতে পারেন তার মেয়েকে হত্যার কথা। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ এসআই শিবু প্রসাদকে জানান। পুলিশের এ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক মনিরুলের বাড়িতে আসেন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন স্ত্রীকে হত্যার পর সে তার বাড়ির পাশে বাগানে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে। এসময় মনিরুলকে আটক করা হয়। পরদিন ৯ অক্টোবর বাঘারপাড়া থানার পুলিশ পুঁতে রাখা তারা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তারা বেগমের মা সবুরা বেগম বাঘারপাড়া থানায় মনিরুলকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি মনিরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মনিরুল ইসলামের ফাঁসির আদেশ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
নড়াইল সংবাদদাতা জানান, নড়াইলে দু মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার নড়াইল জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ দণ্ডাদেশ দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ব্রজপাটলী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আনসার গাজীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও হায়াত গাজীর ছেলে আব্দুল হাকিম গাজী। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক ছিলেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৭ আগস্ট বিকেলে নড়াইল-যশোর সড়কের সদর উপজেলা আবাদ মোড়ে স্যালোমেশিনচালিত একটি আলম সাধুর বডির ভেতরে বিশেষ কায়দায় রক্ষিত ১হাজার ২২৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে পুলিশ। এ মামলায় ৯জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযুক্ত আসামিদের এ দণ্ডাদেশ দেন আদালত। এছাড়া জব্দকৃত ফেনসিডিল ধ্বংস এবং আলমসাধুটি নিলামে বিক্রির মাধ্যমে বিক্রয়কৃত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। আসামিদের গ্রেফতারের দিন থেকে সাজা কার্যকর করা হবে বলে আদেশ দেন বিচারক।