শিশু রোগের প্রকোপ ধারণ ক্ষমতার চারগুণ রোগী যশোর জেনারেল হাসপাতালে

0

বিএম আসাদ ॥ যশোরে ব্যাপকহারে বৃৃদ্ধি পেয়েছে শিশু রোগ জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ঠ, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বর্হিবিভাগে একদিকে যেমন শিশু রোগীর ভীড় বাড়ছে, তেমনি ওয়ার্ডে ঠাঁই হচ্ছে না শিশুদের। নির্ধারিত বেডের চেয়ে চারগুণ বেশি রোগী হওয়ায় তারা বেড না মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু বহিঃবিভাগে গতকাল সকালে সদর উপজেলার বসুন্দিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন তার ১১০ মাস বয়সী কন্যা শিশু তাবাসসুমকে চিকিৎসা করাতে আনেন। দেলোয়ার হোসেন জানান, সে এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত। একই উপজেলার হামিদপুর গ্রামের স্বপন হোসেনের ৫দিন বয়সী নবজাতক ইয়াসমিনকে আনা হয় বহিঃবিভাগে। তিনি জানান তার কন্যার ঠান্ডা লেগেছে। তাই চিকিৎসকের কাছে আনা হয়েছে। শুধু তাবাসসুম কিংবা ইয়াসমিন নয়। এরকম ১শ ৪০ জন শিশুকে কাল শিশু বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কোন কোন দিন এ বর্হিবিভাগ থেকে ১শ ৯৬ জনকে ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর বর্হিবিভাগ থেকে ৩ হাজার ৭শ ৩৭ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। জুনে চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ৪শ ৭৮ জন। ৩ মাসের ব্যবধানে হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে রোগী বেড়েছে ২ হাজার ২শ ৫৯ জন। এদের ভেতর অনেকেই জ্বর, শ্বাসকষ্ঠ, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। যাকে বলা হচ্ছে “ভাইরাস ফ্লু”। অনুরূপভাবে হাসপাতালের আন্তবিভাগ শিশু ওয়ার্ডে রোগী কানায় কানায় ভর্তি। ২৪টি বেডের বিপরীতে গতকাল দুপুর পর্যন্ত রোগী ছিল ১শ ৮ জন। অর্থাৎ ৪ গুনের বেশি। তারা সকলেই “ভাইরাল ফ্লু”তে আক্রান্ত। বেড়ে জায়গা না হওয়ায় অতিরিক্ত শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগীর ভীড়ে শিশু ওয়ার্ডে চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়েছে। সারাক্ষণ শিশুদের কান্না আর চিৎকারে পরিবেশ ভারী হয়ে পড়েছে। সেখানে ১টি মাত্র নেবুলাইজার মেশিনে সবশিশুর চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। নেবুলাইজারের গরম ছ্যাঁকা দেয়ার জন্য শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা দীর্ঘসময় লাইনে অপেক্ষা করছেন। ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ঠ হলে শিশুদের নেবুলাইজার দেয়া হয়।
সূত্র জানিয়েছেন, শিশু ওযার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ চিকিৎসকগণ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন পরিস্থিতি ভাইরাল ফ্লুতে রূপ নিয়েছে। হাসপাতালের বর্হিবিভাগের শিশু কনসালটেন্ট ডা. জেসমিন সুমাইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিশু বর্হিবিভাগে এত বেশি রোগী আসছে যে, তাদের চিকিৎসা দিতে অতিরিক্ত পরিশ্রম হচ্ছে। শিশু ও তাদের অভিভাবকদের ভীড়ে অনেক সময় চেম্বারে হৈ-হল্লা পরিবেশ বিরাজ করে। শিশুরা জ্বর-শ্বাসকষ্ঠ, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান ও এ অবস্থাকে “ ভাইরাল ফ্লু” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন রোগে শিশুরা অতিবেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছে। যাকে বলা হয় “ভাইরাল ফ্লু”। শহরে কিংবা গ্রামে সব জায়গা থেকে শিশু রোগী আসছে হাসপাতালে। আক্রান্ত ওইসব শিশুদের বর্হিবিভাগ ও ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে শিশু রোগীর সংখ্যা ্েবশি। এখন যে আর হাওয়া তা শিশুদের জন্য প্রতিকুল। এ পরিস্থিতিতে শিশুদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তিনি অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ঠান্ডা কিংবা গরম পরিবেশে শিশুদের রাখা যাবে না। সময়োপযোগী জামাকাপড় ব্যবহার করতে হবে।