চৌগাছায় ইউপি নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড়: ‘জয় নিশ্চিত’ জেনে নৌকা প্রতীক পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তদবির

0

এম. এ রহিম চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) এর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর। এছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাই ২০ অক্টোবর, বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর, আপিল নি®পত্তি ২৪ ও ২৫ অক্টোবর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৬ অক্টোবর, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ অক্টোবর এবং ভোটগ্রহণ ১১ নভেম্বর। এর মধ্যে এবার উপজেলার শুধু ফুলসারা ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। এদিকে, তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে যারা নৌকা প্রতীক পাওয়ার আশা করছেন তাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীক পাওয়া মানেই বিজয় মোটামুটি নিশ্চিত। সে কারণে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের মনোযোগ আর্কষণের চেয়ে নৌকা প্রতীক পাওয়ার ব্যাপারে তদবির নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চৌগাছার ১১টি ইউনিয়নে নৌকার প্রায় অর্ধশত মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। কে কাকে পেছনে ফেলে নৌকা প্রতীক নিতে পারবেন-সেটাই এখন মূল বিবেচ্য। ফুলসারা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান ও দলের উপজেলা সভাপতি এসএস হাবিবুর রহমানের একমাত্র ছেলের শ্বশুর আব্দুল মান্নান, চৌগাছা মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের প্রভাষক হারুনুর রশিদ, উপজেলা আওয়ামী সাবেক সভাপতি শাহাজান কবিরের ছেলে ও দলের সাংগঠনিক স¤পাদক হুমায়ন কবীর সোহেল এবং আড়াতদাহ গ্রামের মেম্বার আবুল কাশেম নৌকা প্রতীক পাওয়ার চেষ্টা করছেন। পাশাপোল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য দেনদরবার করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক ওবাইদুল ইসলাম সবুজ, সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেমের ছেলে শাহিনুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন ও বর্তমান ইউপি মেম্বার মতলেব হোসেন। সিংহঝুলী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল বাদল মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন। বাদল ছাড়াও এই ইউনিয়নে অন্য যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা হলেন-গত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক স¤পাদক রেজাউর রহমান রেন্দু, ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা আব্দুল হামিদ মল্লিক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সামছুর রহমান টিয়ে, যুবলীগ নেতা দেওয়ান আনিচুর রহমান, বর্তমান মেম্বার আব্দুস সামাদ ও আব্দুর রশিদ। ধুলিয়ানী ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলাউদ্দীন, শফিকুল ইসলাম ও মাস্টার আব্দুল আলিম। চৌগাছা সদর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা আওরঙ্গজেব চুন্নু, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক আবু সাঈদ মানিক, মৎস্যজীবী সমিতির নেতা আবুল কাশেম নৌকা প্রতীক পাওয়ার চেষ্টা করছেন। জগদীশপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক তবিবর রহমান খান, তবিবর রহমানের ভাতিজা আজাদ রহমান খান, সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মাস্টার সিরাজুল ইসলাম নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। পাতিবিলা ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিয়া। তিনি গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। পাতিবিলা গ্রামের সাবেক সেনাসদস্য আশরাফুল আলমও এবার নৌকা চান। হাকিমপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান, দলের ইউনিয়ন শাখার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক স¤পাদক মাহফুজুর রহমান ডেভিড, মাঠচাকলা গ্রামের মামুনুর রহমান ও হাকিমপুর গ্রামের মাস্টার তসলিমুর রহমান। স্বরুপদহ ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী নুরুল কদর, গত নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ার হোসেন, গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হওয়া সানোয়ার হোসেন বকুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর স¤পাদক মাহাবুবুল আলম রিংকু এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা সোলাইমান হোসেন নৌকা প্রতীক চাইছেন। নারায়ণপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা জয়নাল আবেদীন মুকুল শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন-উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ স¤পাদক ও চৌগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ স¤পাদক প্রভাষক অমেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা বাদেখানপুর গ্রামের আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিদ্যুৎ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাজরাখানা গ্রামের শাহিনুর রহমান শাহিন ও ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন। এছাড়া সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেতে ৭ জন তৎপরতা চালাচ্ছেন। এরা হলেন-বর্তমান চেয়ারম্যান গত নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী তোতা মিয়া, গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য চাঁদনী আক্তার, সাবেক চেয়ারম্যান ও যশোর জেলা পরিষদ সদস্য হবিবর রহমান, গত নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী মাস্টার নুরুল ইসলাম, সুলাইমান হোসেন, আক্তারুজ্জামান ও ইকবল হোসেন। ভোটাররা জানিয়েছেন, নির্দলীয় ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ উৎসবে পরিণত হতো। রাজনীতির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও আত্মীয়তার সমীকরণ। সাধারণ মানুষের সাথে প্রার্থীদের স¤পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। কিন্তু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন শুরুর পর এমন সমীকরণ পাল্টে গেছে। বিরোধীদলগুলো কোণঠাসা থাকায় নির্বাচন হয়ে গেছে একপেশে। যে কারণে ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহও অনেক কমেছে। মাঠে কার্যত বিরোধীদলশূন্য অবস্থা থাকায় ‘নৌকা পেলে জয় নিশ্চিত’-এমন ধারণায় ক্ষমতাসীন দলের ডজন ডজন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতিমধ্যে তারা এলাকা ছেড়ে রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহরের নেতাদের কাছে ছুটছেন দলের টিকিট পাওয়ার আশায়। তবে, নির্বাচনে মেম্বার পদে দলীয় প্রভাব না থাকায় প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।