সাধারণের নাগালের বাইরে বাজার দর

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভরা মৌসুমে দাম কমার পরিবর্তে এ সপ্তাহে ইলিশ মাছ প্রতি কেজিতে বেড়েছে আরও ৪০০ টাকা। কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে খামারের মুরগির দাম। মাত্র দু দিনের ব্যবধানে ভোজ্য তেলের দাম প্রতি কেজিতে বাড়লো ৫ টাকা। সরকার দাম নির্ধারণ করার পরও এখনও চিনির দাম কমেনি। বেধে দেওয়া দাম খোলা চিনি ৭৪ ও প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে ৮০ ও ৮৫ টাকা। বাজারে সবজির দামও অনেক বেশি। ভোক্তাদের আক্ষেপ সরকারি তদারকি সংস্থা সঠিকভাবে বাজার তদারকি করে না বিধায় প্রতিনিয়ত এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশকে সরকার সময় দিয়েছে ২২ দিন। আগামী সোমবার অর্থাৎ ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশ ধরা, বিক্রি, মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ এই ভরা মৌসুমেও ইলিশ মাছের দাম কমলো না। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভোক্তাদের অভিযোগ দেশের মানুষকে মৌসুমেও ইলিশ খাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে পাঠানো হচ্ছে ভারতে। সরকার আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৪৬ লাখ কেজি ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার যশোরের বড়বাজারে খুচরা বিক্রেতা এরশাদ আলী দেড় কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ১৮শ টাকা দরে বিক্রি করেছেন, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৪শ টাকা। এক কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৫শ টাকা, গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ১১শ টাকা। ৫শ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৯শ টাকা, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৬শ টাকা দরে। বড়বাজারে গতকাল বিক্রেতা ইমরান হোসেনকে খামারের সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ২৯০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৬০ টাকা। ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ টাকা।
এদিকে বাজারে ভোজ্য তেলের দামও বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার খুচরা বিক্রেতা রবি ব্যানার্জি খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, সুপার তেল ১৪২ টাকা, পাম তেল ১৩৭ টাকা ও সরিষার তেল ১৬৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি জানান মাত্র দুদিনে পাইকারি বাজারে প্রতি ড্রামে (১৮৫ কেজি) ৫শ টাকা বেড়েছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে ৫ টাকা করে বেড়েছে। অপরদিকে সরকার চিনির খুচরা মূল্য নির্ধারণ করার পরও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। গতকাল শুক্রবারও বড়বাজারে দোকানগুলোতে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৮০ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ সরকার গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে খুচরা বাজারে খোলা চিনি প্রতি কেজি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকায় বিক্রি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকে ওই দাম নির্ধারণ করা হয়। ওই বৈঠক শেষে অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘চিনির দাম বেড়ে ৮০ টাকায় উঠেছিলো। আমরা কেজিতে ৫ টাকা কমিয়েছি। এখন থেকে খোলা চিনি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হবে।
সবজির অগ্নিমূল্যও সাধারণ মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। বড়বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা নাসির আলী জানান, গতকাল শুক্রবার ফুলকপি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২শ টাকা, গাজর ১৭০ টাকা, শিম ১২০টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, ওল ৫০ টাকা, শসা ৫০ টাকা। মাছ বাজার রোডে পাইকারি বিক্রেতা মণিরামপুর ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী গোলাম মোস্তফা বাবলা জানান, ‘সম্প্রতি বৃষ্টিপাতে সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শীতকালীন নতুন সবজি উঠতে এখনও মাসখানেক সময় লাগবে। ততদিন বাজারে সবজির দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে নাকাল বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মিজানুর রহমান গতকাল জানান, ‘নদীর পরিপুষ্ট ইলিশ আমাদের ভাগ্যে জুটলো না, চলে গেল ভারতে। ফলে ভরা মৌসুমে ইলিশের দাম কমার পরিবর্তে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। চিনির খুচরা বাজার দর তিন সপ্তাহ আগে সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ দোকানিরা দিব্যি আগের বর্ধিত দামেই বিক্রি করে চলেছে। সরকারের নির্ধারিত দর সরকারেরই তদারকি সংস্থাগুলোও উপেক্ষা করে চলেছে, তাদের এই তিন সপ্তাহে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। খোলা চিনি ৭৪ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে এখনও বিক্রি হচ্ছে ৮০ ও ৮৫ টাকা।