দেশীয় ব্রয়লার হোক দেশী মুরগির বিকল্প

0

এবারে দেশী স্বাদ ও রঙের একটি নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। দেশী এবং বিদেশী জার্মপ্লাজমের ধারাবাহিক সিলেকশন ও ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে বেশি মাংস উৎপাদনকারী এই জাতের মুরগির নাম রাখা হয়েছে দেশীয় ব্রয়লার। এটি খেতে সুস্বাদু এবং পালকের রং দেশী জাতের মুরগির মতো মিশ্রবর্ণের। দামও হবে সস্তা। ফলে বাজারও পাওয়া যাবে ভাল। এর নাম দেয়া হয়েছে মাল্টিকালার টেবিল চিকেন। প্রচলিত সোনালি বা অন্যবিধ ককরেল মুরগির তুলনায় এর কদর বাড়বে বাজারে। ফলে লাভবান হতে পারবেন পোল্ট্রি খামারিরা। আট সপ্তাহ বা ৫৬ দিনে এর ওজন হবে প্রায় ১ কেজি। অথচ অন্যান্য ফার্মের মুরগির এই ওজন পেতে সময় লাগে ৯০ দিন। তদুপরি এই মুরগির লালনপালন সহজ, সাশ্রয়ী, দেশীয় আবহাওয়া ও পরিবেশের উপযোগী। ২০১৪ সাল থেকে নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে এই মুরগির জাতের উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিউটের বিজ্ঞানীরা। আপাতত চারটি সরকারী এবং দুটি বেসরকারী পোল্ট্রির মাধ্যমে এই মুরগি বাজারজাত করা হবে সারাদেশে। পরবর্তীতে চাহিদার ভিত্তিতে ছড়িয়ে দেয়া হবে মাঠ পর্যায়ে।
করোনা ভাইরাসের ছোবলে পড়ে পোশাক শিল্প, চামড়া শিল্পসহ ছোট-বড় শিল্প-কারখানাই শুধু বিপর্যস্ত হয়নি, বরং সমূহ বিপদে পড়েছে কৃষি খাত। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্বিকভাবে কৃষি ও কৃষিপণ্য। ধান-পাটের চাষাবাদসহ বোরো মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট, মৌসুমি ফুল-ফল চাষী ও ব্যবসায়ী, মৎস্য চাষ ও জেলে সম্প্রদায়, কামার, কুমার, তাঁতি সম্প্রদায় সর্বোপরি পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিম্পদ খাত। সারাদেশ গত দু’বছর ধাপে ধাপে লকডাউনে থাকায় এবং মুজিব শতবর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষ-বিয়েশাদি-পর্যটন-হোটেল-রেস্তরাঁসহ জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন ব্যাহত ও বিঘিœত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রায় সবারই পথে বসার উপক্রম ঘটেছে। তবে এ মুহূর্তে সর্বাধিক বিপদে আছে পোল্ট্রি ও গবাদি খামার শিল্প। ডিম ও দুধের বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে এই দুটো খাতে প্রায় ধস নেমে এসেছিল। মুরগির বাচ্চা বিক্রি না হওয়ায় জ্যান্ত ছানা ফেলে দেয়া হয়েছে। ডিমের ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। সরকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর জন্য মাত্র ৪ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে, যার তদারকিতে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দেশ হাঁস-মুরগি-গবাদিপশু পালনে প্রায় স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। মাথাপিছু দুধ-ডিম-মাংস-মাছ তথা প্রোটিনের ঘাটতিও কমছে ক্রমশ। তবে পশুখাদ্যের দাম অত্যাধিক ও ভেজালমিশ্রিত। সম্প্রতি ভারতে রফতানি হওয়ায় দামও বেড়েছে। সুতরাং বিকাশমান এ দুটো খাতে সর্বতোভাবে প্রণোদনা দিতে হবে। স্বল্প সুদে ঋণ এর জন্য সহায়ক হতে পারে।
গত বারো বছরের মধ্যে পোল্ট্রির দাম সর্বনিম্ন থাকায় এই শিল্পে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। পোল্ট্রি শিল্পে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৬০ লাখ লোকের। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল সরকারের কাছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান সুবিধাগুলো যেমন- অগ্রিম কর, অগ্রিম আয়কর, কর ও শুল্ক, ভ্যাট স্থগিত রাখাসহ ফিডের কাঁচামাল আমদানির সুবিধা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো বিবেচনা করবে বলেই প্রত্যাশা। দেশী স্বাদ ও রঙের মুরগির জাতের উদ্ভাবন এক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি অবশ্যই।