রাজনীতি সরব হোক, মুক্ত হোক গণতন্ত্র

0

বিশ্বব্যাপী গত প্রায় দু’বছর ধরে চলমান করোনা অতিমারীর কারণে রাজনীতির অঙ্গন প্রায় নিশ্চুপ ও নিষ্প্রভ থাকলেও আবার তা সরব হয়ে ওঠার লক্ষণ দেয়া দিয়েছে। বিশেষ করে গত ৯ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের পূর্বাভাস দেয়ার পর থেকেই। গণভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় তিনি দলের নেতাকর্মীদের তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও জোরদার ও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন। পরদিন সম্পাদকমন্ডলীর সভায়ও দলটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের প্রস্ততি নিতে বলেছেন নেতাকর্মীদের। অতঃপর প্রধান বিরোধী দল বিএনপিই বা বসে থাকবে কেন? তারাও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন বিএনপির হাইকমান্ড ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। অতঃপর আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামও। রাজধানীর বারিধারায় গোপন বৈঠককালে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে দলের সেক্রেটারি জেনারেলসহ কয়েক নেতাকে। দলটির বিরুদ্ধে বরাবরের ন্যায় ধর্মকে পুঁজি করে দেশবিরোধী অপরাজনীতি ও নাশকতার অভিযোগ উঠেছে এনেছে। পুলিশ এবারও দফায় দফায় রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এছাড়াও মাঠে রয়েছে আরও কয়েকটি দল।
এতদিন পর্যন্ত প্রায় মৃতবৎ রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমশ মুখর হতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পদচারণায়। কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক দলীয় কার্যালয়গুলো দীর্ঘদিন পর ধোয়া-মোছা ও ঝাড়পোছ করে কার্যোপযোগী করে তোলা হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা নেতাকর্মীরাও আসছেন। অনেকের মুখে সুরক্ষার নিমিত্ত মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস থাকলেও অধিকাংশের তা নেই, বিশেষ করে মধ্যম সারির নেতা এবং নিচের স্তরের নেতাকর্মীদের। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই তারা রাজনীতির মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে সব দলই পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠনে ব্যস্ত। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, এবার তারা নতুন কমিটি গঠন করবে অনেক যাচাই-বাছাই করে; যাতে অতীতের মতো বিতর্কিতরা অর্থাৎ, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদরের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ ঢুকতে না পারে। বলাবাহুল্য এটি সব দলের জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ। বিএনপিও ব্যস্ত নতুন কমিটি গঠন নিয়ে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিসহ অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় আগামীতে রাজনীতিতে কতটা সক্রিয় হতে পারবেন সে বিষয়েও ভাবতে হচ্ছে। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর দলটি কার্যত হয়ে পড়েছে বিভক্ত, দিকভ্রান্ত ও নেতৃত্বশূন্য। এর ফলে দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যতই হয়ে পড়েছে ছন্নছাড়া ও অনিশ্চিত। তবে বৃহৎ দল বিএনপিকে ঘিরে আন্দোলকারী দলগুলো সংঘবদ্ধ হবার যে চেষ্টা করছে তা সফল হলে রাজপথ উত্তপ্ত হবে।
গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তা প্রায় অনুপস্থিত। এই দুরবস্থা যথাসত্বর কাটিয়ে ওঠা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সরকারও বলে যে, দেশের শক্তিশালী ও গঠনমূলকবিরোধী রাজনীতি ও দলের বিকাশ ঘটুক। তবে তারা তা চায় কি-না তা নিয়ে সবারই প্রশ্ন রয়েছে। আগামীতে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বয়ে যাক এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়ন হাতধরাধরি করে চলুক এই প্রত্যাশা দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের। রাজনীতি করুক না করুন সব মানুষই চায় মুক্ত নিঃশ্বাসে বুক ফুলিয়ে মনের কথ াবলতে। সত্য বলার পর আপন ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চায় প্রতিটি মানুষ। আমরা চাই সক্রিয় হোক সুস্থ রাজনীতি, মুক্ত হোক নির্ভেজাল গণতন্ত্র।