শৈলকুপার রানীনগরের দুই শতাধিক পুরুষ বাড়িছাড়া ৪ মাস

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ॥ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রানীনগর গ্রামের দুই শতাধিক পুরুষ সদস্য প্রায় ৪ মাস ধরে বাড়ি ছাড়া হলেও সমস্যা সমাধানের কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দলাদলির কারণে সিদ্দিক হোসেন মোল্লা, ইয়ারুচ শেখ, আবু বকর, মহিউদ্দীন, তোফাজ্জেল হোসেন, হাফিজ উদ্দীন, মনজুর হোসেন, আনোয়ার, আমিরুল বিশ্বাস, আক্তানুর, মনিরুল ও মতলেব বিশ্বাসসহ গ্রামের শতাধিক কৃষকের প্রায় চার হাজার কলা গাছ কেটে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। জামিরুল মোল্লা নামে এক ব্যক্তির পা ভেঙে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। শামীম রেজা নামে এক ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর কয়েক কিলোমিটার তার কেটে দেওয়া হয়েছে। আব্দুর রশিদ মোল্লার তিন বিঘা জমির শিম ক্ষেত কেটে দেওয়া হয়েছে। অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাড়িতে থাকা নারী শিশুদের উপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে থানায় মামলা পর্যন্ত করতে ভয় পাচ্ছেন গৃহহারা পরিবারের পুরুষ সদস্যরা।
গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে, গ্রাম্য দলাদলি থেকে সৃষ্ট উত্তেজনায় এ সহিংস অবস্থা। তাদের মতে, গ্রামে একটি বৃহৎ সামাজিক দল ছিল। গত ৪/৫ মাস আগে এই দল ভেঙে যায়। গ্রামের আক্কাচ মোল্লা ও সিদ্দিক মোল্লা একই গোষ্ঠীর চাচাতো ভাই হিসেবে এক সঙ্গেই সামাজিক দল করতেন। কিন্তু স্বার্থগত কারণে সিদ্দিক মোল্লার সঙ্গে ভাই আক্কাচ মোল্লার বনিবনা না হওয়ায় সামাজিক দলটি ভেঙে যায়। রানীনগর গ্রামের ইয়ারুচ শেখ জানান, ৪/৫ মাস আগে দলাদলির ভয়াবহ চিত্র নিয়ে একটি বেসরকারি টিভিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে দুই পক্ষকে থানায় ডেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মীমাংসা করে দেওয়া হয়। কিন্তু দুই দিনও তা টেকেনি। তারপর থেকে এ পর্যন্ত তাদের উপর জুলুম নির্যাতন করা হচ্ছে। বিনা কারণে আক্তানুর মোল্লা, তোফাজ্জেল মোল্লা, ফারুক, আব্দুল গণি, মনিরুল ও নওশের আলীসহ ২০ জনের বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। জখম করা হয় নুরুদ্দীন, বকুল, মতবেল, আব্দুর রশিদ, বকুল, সহিদা ও তরুন মোল্লাসহ ২৫ জনকে। দুই শতাধিক কৃষক পরিবারের চাষাবাদ সব বন্ধ।
এদিকে অভিযোগকারীদের প্রতিপক্ষ আক্কাচ মোল্লা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি জমি কেনাবেচা নিয়ে তাকে দোষারোপ করে তার ভাই সিদ্দিক মোল্লা তাকে বয়কট করেন। ফলে তিনি একা হয়ে যান এবং বিরোধী গ্রুপে যোগ দিলে সেই সামাজিক দলটি গ্রামে বড় হয়ে যায়। এ কারণে সিদ্দিক মোল্লার সামাজিক দলের সদস্যরা এক রকম ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন বলে তার ধারণা। সিদ্দিক মোল্লা বলেন, গ্রামের প্রায় দুই’শ পুরুষ সদস্য ৪/৫ মাস বাড়ি যেতে পারেন না। বাড়িতে মহিলাদের মানসিকভাবে নির্যাতন ও হুমকি দেওয়া হয়। তিনি নিজেও শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ বাজারে থাকেন। তার মতো অনেকেই বাড়ি ভাড়া করে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে রাত কাটাচ্ছেন। স্কুল কলেজে পুড়য়া বহু শিক্ষার্থী বাড়ি যেতে পারছেন না। তাদের পড়ালেখা বন্ধ। স্থানীয় ইউপি মেম্বর শফিকুল ইসলাম শফি জানান, রানীনগর গ্রামে দুইট সামাজিক দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মোল্লা, শেখ, বিশ্বাস ও মন্ডলসহ পাঁচটি গোষ্ঠীর দুই শতাধিক মানুষ বাড়ি ছাড়া। শফিকুল জোয়ারদার তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কোনো গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন না। আগামীতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করবেন বলে মনস্থির করেছেন। দুই পক্ষ তার কাছে ভালো। তিনি বলেন যারা বাড়ি ছেড়েছেন তারা নিশ্চয়ই কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত আছেন, তা না হলে তারা কেন বাড়ি ছেড়েছেন? এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায় ৬ মাস আগে উভয় পক্ষের সাথে মীমাংসা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এ ঘটনা নিয়ে আর কী হয়েছে বা এখন কী হচ্ছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তিনি বলেন, কেউ বাড়ি ছাড়া বা ক্ষেতের ফসল কাটলে তো অভিযোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু কেউ তো অভিযোগ দেয়নি। তিনি জনান, কেউ বাড়ি যেতে না পারলে দ্রুতই তাদের বাড়ি তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।