২০ কার্যদিবসে রায় : একই পরিবারের ৪ খুনের রায়ে ছোট ভাইকে মৃত্যুদণ্ড

0

শেখ মাসুদ হোসেন, সাতক্ষীরা॥ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় বাবা-মা ও ভাইবোনসহ একই পরিবারের চার খুনের মামলার রায়ে ছোট ভাই রায়হানুর রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এ আদেশ প্রদান করেন। সাতক্ষীরা বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম কোন হত্যা মামলায় মাত্র ২০ কার্যদিবসে রায়ের আদেশ হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের বাসিন্দা শাহাজাহান হোসেনের তিন ছেলে। বড় ছেলে শাহীনুর রহমান আট বিঘা জমিতে পাঙাশ মাছ চাষ করতেন। মেজ ছেলে আশরাফ আলী মালয়েশিয়ায় থাকেন। ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান ছিলেন বেকার। তিনি বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে খাওয়াদাওয়া করতেন।


২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় রায়হানুর রহমানের। সংসারে টাকা দিতে না পারায় তাকে মাঝেমধ্যে বকাবকি করতেন ভাই শাহীনুরের স্ত্রী সাবিনা খাতুন। এর জের ধরে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে রায়হানুর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান। রায়হান তার ভাই শাহীনুর, ভাবী সাবিনা খাতুন, তাদের ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী ও মেয়ে তাসমিন সুলতানাকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান। পরদিন ভোর চারটার দিকে ওই চারজনকে হাত ও পা বেঁধে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। তবে এই দম্পতির চার মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে যান। নিহত শাহীনুর রহমানের শাশুড়ি ময়না খাতুন ১৫ অক্টোবর থানায় হত্যা মামলা করেন। তখন কাউকে সন্দেহ করতে না পারায় তিনি আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করেননি। তদন্তে নেমে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা সন্দেহভাজন হিসেবে রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক, আবদুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেপ্তার করে। রায়হানুর ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মন্ডলের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জানান, তিনি একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। রায়হানকে একমাত্র আসামি দেখিয়ে ২৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে দায়রা জজ আদালতে মামলার ১৮ জন সাক্ষী ও এক জন সাফাই সাক্ষী দেন। গত ২২ আগস্ট যুক্তিতর্ক শেষে সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শেখ মফিজুর রহমান ২৯ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। ওই দিন সিনিয়র জেলা দায়রা জজ ছুটিতে থাকায় রায় ঘোষণা করা হয়নি। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক পরবর্তী দিন আজ (মঙ্গলবার) রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। এই পরিবারের বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে। সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বেঁচে যাওয়া এই শিশুর দায়িত্ব নেন এবং সাতক্ষীরা থেকে বদলী হয়ে চলে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে মারিয়া ফাউন্ডেশন গঠন করেন। এই ফাউন্ডেশন মারিয়ার দায়িত্ব পালন করছে। সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। এ রায়ের মধ্যে দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আসামি পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম হায়দার বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে আপিল করবো।