যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছে মন্ত্রণালয়

0

সিরাজুস সালেকিন
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দীর্ঘ দেড় বছর পর খুলেছে স্কুল-কলেজের ফটক। গতকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাসরুমে পাঠদান কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে। শুরুর দিকে এসএসসি ও এইচএসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস হবে। বাকিদের সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস নেয়া হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পৃথকভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। মোট নয়টি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়নে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সচেতনতার অভাব ছিল না।
কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা শহরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি টিম দৈবচয়নের ভিত্তিতে গতকাল প্রায় ২০টির অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে। যেসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করেন সেগুলো হচ্ছেÑ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ওয়াশরুম, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ, কোভিড-১৯ অতিমারি নির্দেশনা, প্রাথমিক চিকিৎসা ও আইসোলেশন, মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ও উপস্থিতি। মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সব প্রতিষ্ঠানে মাস্ক পরিধানের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। ক্লাসরুমে তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছিল। মোটামুটি সবগুলো প্রতিষ্ঠানের বাইরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা থাকলেও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা অপ্রতুল। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্তভাবে পরিচ্ছন্ন ছিল না। বিশেষ করে ওয়াশরুমগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার ছিল না। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নির্দেশনা টানানো ছিল না। স্বল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা ছিল। আর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে সন্তোষজনক ছিল না। মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকা শহরের শত শত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমরা মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানে যে সকল ঘাটতি দেখা গেছে সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নির্দেশনা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রচার ও বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের বলা হয়েছে। এ ছাড়া বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের গেটে চায়ের দোকান ও হকার লক্ষ্য করা গেছে। এসব জায়গায় অভিভাবকরা এবং বহিরাগতরা ভিড় করছেন যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
শ্রেণিকক্ষে আবর্জনা, অধ্যক্ষকে শোকজ: রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে ময়লা-আবর্জনা দেখতে পান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাছিবুর রহমানকে শোকজ এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তা সেলিনা হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শনে গিয়ে এ নির্দেশ দেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এই তথ্য জানান। মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক জানান, একটি কক্ষ অপরিষ্কার পেয়েছি। উনাকে আমরা প্রথমে শোকজ করবো, কিছু করতে হলে তো আগে শোকজ করতে হয়। আজিমপুর গার্লসে পরিদর্শনে আসা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিচ্ছন্নতার নিয়ম না মানায় অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে অধ্যক্ষের নেতৃত্বে গঠিত মনিটরিং কমিটির সদস্য শিক্ষকদেরও সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী এরপর তাদের কারণ দর্শাতে বলা হবে। তার জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে এসে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বাইরে অপেক্ষায় থাকা সাংবাদিকদের বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সবার সচেতনতা এক রকম নয়। যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাবেন, তাদের একটু সচেতন থাকতে হবে। স্কুলের প্রতিটা আনাচে-কানাচে খুঁজে দেখতে হবে। কোথাও যেন ময়লা না থাকে। যতোটা ভালো পারা যায়, আমরা চেষ্টা করছি।