হঠাৎ ধরপাকড় নানা আলোচনা

0

শাহনেওয়াজ বাবলু॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর বছর দেড়েক। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো। শিগগিরই সরকারের পদত্যাগ ও নিরপক্ষে সরকারের দাবিতে আন্দোলনের কথা বলছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতারা। দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান তারা। এদিকে একাদশ নির্বাচনের পর বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অনেকটাই কম ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ফের আতঙ্ক শুরু হয়েছে বিরোধী শিবিরে। গত সোমবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনালেরসহ ৯ জনকে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। গত বুধবার রাজধানীর জিগাতলা থেকে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজিব আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরআগে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা এবং মহানগরে গত এক সপ্তাহে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এদিকে নবগঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশ এবং দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চন্দ্রিমা উদ্যানের এ ঘটনা নিয়ে বিএনপি’র শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে এই মামলার প্রায় সবাই উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনও নিয়েছেন।
এদিকে সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের হাঁকডাক দিচ্ছে। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এখনো চলমান। বাংলার আকাশে এখনো ষড়যন্ত্রের গন্ধ আছে। যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতিশীল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সামনের দিনগুলো অনেক চ্যালেঞ্জ। তাই আরও সতর্ক হতে হবে এবং সবাইকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর বিএনপি’র এক নেতা বলেন, গত এক বছর ধরে নিজ বাসায় থাকছি। এরমধ্যে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে মধ্য রাতে আমার মোহম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। যদিও সেদিন ব্যবসায়িক কাজে ঢাকার বাইরে ছিলাম। ওই দিনের ঘটনার পর থেকে নিজের বাসায় আর থাকছি না। বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার এড়িয়ে নেতাদের নিরাপদে থাকার নির্দেশনাও দল থেকে দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণে আন্দোলন সফলের দায়িত্বে সাধারণত যেসব নেতা থাকেন, তাদের অধিকাংশই রাতে বাড়ি থাকছেন না। বিএনপি’র সিনিয়র এক নেতা বলেন, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা। সেসব মামলার অনেকগুলোর আসামি আবার অজ্ঞাত। এজন্য চাইলে যে কাউকেই সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। এভাবে মামলার পর মামলা দেয়া হচ্ছে। সঙ্গত কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্ক তো থাকবেই। সরকার বিনা ভোটে হওয়ায় তাদের মধ্যেও আতঙ্ক আছে যেকোনো সময় পতন হতে পারে। এজন্য বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজপথে দাঁড়ানোর সুযোগ ক্ষমতাসীনরা নেবেন না। তাই গ্রেপ্তারের পথ বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপি’র এই নেতার মতে, সরকার তার নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে বিএনপি’র ওপর নতুন করে গ্রেপ্তারের খড়গ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু নেতাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। উদ্দেশ্য, বিএনপিকে সুসংগঠিত হতে না দেয়া। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারে বিভিন্ন বক্তব্য, মন্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জনগণ যেহেতু বিক্ষুব্ধ সেই দৃষ্টিকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য এই নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এই সরকার তো ফ্যাসিজমের চরম পর্যায়ে চলে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে জনগণ যেকোনো সময় জেগে উঠতে পারে বুঝেই তারা এসব করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সরকারের হাতিয়ার তো পুলিশ। তারা তো এখন আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নেই। তারা এখন একটি দল এবং গোষ্ঠীর কর্মচারী হয়ে গেছে। জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার অধিকার আছে। এটা দেশের জনগণের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এখতিয়ার কারও নেই। আর সরকারের দমনপীড়ন এটাতো নতুন কিছু নয়। অতীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করে জনগণের ন্যায় সংগত অধিকার আদায়ের কোনো আন্দোলনকে দমন করা যায়নি। এখনো যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ডিআইজি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নাশকতাকারী এবং জঙ্গি গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটতে পারে। মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য যারা নাশকতার পরিকল্পনা করছে এবং পুরনো মামলায় যারা আসামি তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে এতে কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হবে না বলেও জানান তিনি।