অপেক্ষা শিক্ষার্থীদের কতোটা প্রস্তুত স্কুল-কলেজ?

0

পিয়াস সরকার॥ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বাদল। বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা শুনে যত্নে রাখা স্কুলের পোশাক বের করেছে আলমারি থেকে। এই দেড় বছরে তা আর পরার জো নেই। ছোট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে ছুটতে হলো টেইলার্সের দোকানে। মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাদল বলে, দোকানে গিয়ে কোনো কথা বলার আগেই বলেন কোন স্কুল? শার্ট না প্যান্ট? সেখানে দেখলাম অনেকেই এসেছে স্কুলের পোশাক বানাতে। অনি বাবাকে অফিসে যাওয়ার আগেই বলে দিয়েছে তাড়াতাড়ি আসতে। বাবাকে নিয়ে খাতা, কলম, পেন্সিল, পানির পট, নতুন ব্যাগ কিনবে। এভাবেই বলছিলেন অনির মা হাশুরা আক্তার রুমকি। অনি এবার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত স্কুল কি তাই জানে না সে। রংপুরের মিলিনিয়াম স্টারস স্কুলের শিক্ষার্থী ও। বাদল, অনির মতো লাখো শিক্ষার্থীর অপেক্ষা স্কুলে যাওয়ার। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় স্টেশনারি দোকানগুলোতে দেখা যায়, বেশ ভিড়। ভিড় করে কেনা হচ্ছে খাতা, কলম, পেন্সিল, স্কেল, জ্যামিতি বক্স। হাসান স্টেশনারি, খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা। এর ম্যানেজার মো. আনিসুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময়ে ব্যবসা কমতে কমতে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছি। এখন একটু ক্রেতা বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ডার আসছে। গত দু’দিনে দেশের ১৮ জেলায় অর্ডার নিয়েছি। দু’দিনে যা অর্ডার নিয়েছি তা দুই মাসেও বিক্রি হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা পুরান ঢাকা থেকে অর্ডার দিয়ে পণ্য বানিয়ে নেই। এখন তাদের ব্যস্ততাও বেড়েছে।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের ফেরানোর। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল প্রস্তুতির শেষদিন। গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজে মেলে ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর রাজাবাজারে নাজনীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলের ভেতরে বেঞ্চ, ক্লাসরুম সবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কিন্তু মাঠে জমে আছে পানি। কোনায় রাখা ভাঙা ভ্যান। গোলপোস্ট আছে উল্টে। দেয়ালের কোনায় দেখা মেলে মাদকদ্রব্যের অস্তিত্ব। আর স্কুলের বাইরে হাত ধোয়ার বেসিনের অবস্থা বেহাল। ময়লা জমে আছে। ট্যাপ থাকলেও বের হয় না পানি। সাবান রাখার স্থান থাকলেও নেই কোনো সাবান। স্কুলের গেটের সামনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ময়লা। কলাবাগানের লেক সার্কাস উচ্চ বিদ্যালয়েও ক্লাস রুমের প্রস্তুতি বেশ ভালো। কিন্তু বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের চিত্র ভয়াবহ। জমে আছে পানি। মাঠে মাটির স্তূপ, ইটের সারি ও রাখা হয়েছে রড। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে নির্মাণকাজ। এই অপরিচ্ছন্ন ও ময়লা পানির জন্য শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গুর ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে। আর স্কুলের প্রবেশমুখেই নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য করা হয়েছে থাকার ব্যবস্থা। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শুক্রাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে গত দেড় বছর ধরে চলছে নির্মাণকাজ। আপাতত শিক্ষার্থীদের স্থানীয় কাউন্সিলরের বাড়ি ভাড়া নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়েও চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিটি ক্লাসের পাশাপাশি মাঠও বেশ পরিচ্ছন্ন। এই প্রতিষ্ঠানের দুটি গেট। ছোট গেটটির নিচে জমে আছে ময়লার স্তূপ। যা থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। পরিচ্ছন্নকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলেন, এগুলো পরিষ্কার করার কথা আমাদের বলেনি। ধানমণ্ডি সরকারি বয়েজ স্কুলের মাঠে চলছিল ঘাস কাটার কাজ। একটি রুমের ভেতরে দেখা যায় ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। ওয়াশরুমগুলোও বেশ পরিষ্কার। ধানমণ্ডি সরকারি বয়েজ হাইস্কুল ও ধানমণ্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও বেশ গুরুত্ব দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নিয়ে মিশ্র প্রস্তুতির কথা জানা যায়। লালমনিরহাট জেলার চরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতার জন্য অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরিদর্শনেও এসেছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তা। স্কুলের মাঠে ঘাস কাটা, শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চ, দেয়াল ইত্যাদি পরিচ্ছন্ন করা, দীর্ঘ বন্ধে ঝিমিয়ে পড়া ফ্যান-লাইট ঠিক করা ইত্যাদি। এ ছাড়াও শিক্ষকদের এক ফেসবুক গ্রুপে দেখা যায় প্রায় সব স্কুলেই চলছে প্রস্তুতি।
ফার্মগেট এলাকায় বেড়েছে হোস্টেলগুলোর চাহিদাও। ফারজানা সাথী ফার্মগেট ও রাজাবাজর এলাকায় তিনটি হোস্টেল পরিচালনা করেন। জানতে চাইলে বলেন, এই দুই-তিন দিনে আমার ৪০টির অধিক সিট বুক হয়েছে। আমার তিন হোস্টেলে ধারণক্ষমতা প্রায় ১৫০ জন। গত মাসেও হোস্টেলে মেয়ে ছিল মাত্র ২৬ জন। দিনে দিনে ভাড়া হচ্ছে। এখানে অধিকাংশই ভার্সিটি ও কলেজের শিক্ষার্থীরা থাকে। আশা করছি সামনের মাস থেকে আবারো মেয়েদের নিয়ে জমজমাট হবে হোস্টেল। আর ক্ষতিটাও পুষিয়ে নিতে পারবো। শুধু হোস্টেলে না বিভিন্ন ফ্ল্যাটেও আনাগোনা শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের। নীলফামারী জেলায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন স্বার্থক রহমান ও রিদি রহমানের মা। শুধুমাত্র লেখাপড়ার জন্যই এই বাসা ভাড়া নেয়া। তাদের বাবা থাকেন বাড়িতে, এই জেলারই ডোমারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন বাড়িতে। এখন স্কুল খোলার খবরে দু’দিন ধরে বাসা খুঁজছেন কিন্তু মিলছে না মনের মতো।