নদীভাঙনে দিশাহারা মানুষ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বন্যার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করা নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ এবার দিশাহারা হয়ে পড়েছে ভাঙনে। যানমাল রক্ষায় অনেকেই ঘরের মালপত্র নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকালেও দেশের ৯টি নদীর পানি ১২টি পানিসমতল স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল কমতে শুরু করেছে, যা আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। দিনের ব্যবধানে গতকাল সকালে ১০৯টি পানিসমতল স্টেশনের ২৭টিতে পানি বাড়লেও কমেছে ৭৯টিতে। অপরিবর্তিত ছিল ৩টি স্টেশনের পানিসমতল। নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আজও সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ এবং শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আমাদের সংবাদকর্মীদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অনেক হতদরিদ্রের শেষ আশ্রয়টুকু। এ ছাড়া বাড়িঘরে বন্যার পানি থাকায় এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি অনেক মানুষ। কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক মানুষ গাদাগাদি করে থাকায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও পশু খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
তথ্যানুযায়ী, নদ-নদীর পানি দ্রুত কমে আসায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ঘরবাড়িতে কাদাপানি থাকায় আড়াই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের বাসিন্দাদের অনেকেই এখনো রয়েছে উঁচু স্থানে কিংবা বাঁধে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে কাটছে অধিকাংশ মানুষের জীবন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় জেলার ৯ উপজেলায় ২৬ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। ১৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমনসহ অন্য ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসব ক্ষতি পুুষিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, এবারের বন্যায় জেলার ২০২ কৃষকের ২২০টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ৫৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে উজানে তিস্তা ও ধরলা নদীর অব্যাহত ভাঙনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চরখিতাব খাঁ, গতিয়াশামসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ও ধরলা নদীর ভাঙনে সদরের সারডোব, জয়কুমর, বড়াইবাড়ি, কিংছিনাই ও জগমোহনেরচরের বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হচ্ছে। গত কয়েক দিনের তীব্র ভাঙনে এসব এলাকায় তিন শতাধিক ঘরবাড়িসহ স্থাপনা ও ভিটামাটি এবং কয়েক হেক্টর আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। টানা এক সপ্তাহ পদ্মা নদীর পানি বাড়ার পর গত মঙ্গলবার থেকে কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে শুরু করায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বিস্তীর্ণ অংশে আবারও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বন্যাকবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছে মাউশি : দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোনো জেলা/উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত থাকলে বা শিক্ষার্থী বন্যাকবলিত থাকলে এ ব্যাপারে তথ্য চেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর-মাউশি। মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের ইমেইলে (ৎবড়ঢ়বহ.সব@িমসধরষ.পড়স) পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাউশি গতকাল এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর পরই এ নোটিস এলো অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া প্রায় ১০০ বিঘা জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন স্থিতিশীল রয়েছে। এলাকার মানুষ তাদের বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত সোমবার গোয়ালডুবি এলাকায় ভাঙন শুরু হলে পাউবো বালুর পরিবর্তে মাটিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করায় তা ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে বাখেরআলী ও চরবাগডাঙ্গা বিজিবি বিওপি, চারটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল, বাগডাঙ্গা ইউপি কমপ্লেক্স, বেড়িবাঁধ পাকা সড়ক, তিন শতাধিক আমবাগান, ১১টি গ্রাম, তিনটি বাজার এবং পাকা সড়কের পশ্চিমে সাড়ে ৪ হাজার বসতভিটা ভাঙনের কয়েক শ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। স্থানীয় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, গত সোমবার থেকে হঠাৎ করেই চরবাগডাঙ্গা গোয়ালডুবি এলাকায় নতুন করে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি ভাঙনে সর্বমোট ১ হাজার ৩০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছে। তাদের নির্দেশনায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, গত সোমবার মাটিভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলায় ঠিকাদারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে এবং সেই দিন নদীতে ফেলা জিও ব্যাগের তালিকা বাতিল করা হয়েছে।