কোন ফর্মুলায় হবে ক্লাস? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ দেড় বছরের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ১২ই সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ। প্রতিষ্ঠান খোলার রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে আজ বসছে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখনই শিক্ষার্থীরা পুরোদমে ক্লাসে ফিরতে পারছে না। ধাপে ধাপে শুরু হবে ক্লাস। এ ছাড়া সপ্তাহে একদিন দুইদিন একেক শ্রেণির ক্লাস হবে। ক্লাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীদের মানতে হবে সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা তৈরি করেছে স্ব স্ব বিভাগ। আজকের বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হবে। সরকারি অনুমোদন পেলে আগামীকাল থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নির্দেশনা পাঠানো হবে মাঠ পর্যায়ে প্রচারের জন্য।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরে পালনীয় কিছু বেশকিছু নির্দেশনা তৈরি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এগুলো বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে মাউশি। মাউশি সূত্রে জানা গেছে, ?প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শ্রেণির সশরীরে পাঠদান শুরু হবে না। প্রথমে পিএসসি, এসএসসি ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সশরীরে পাঠদান শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সশরীরে পাঠদান শুরু হবে। আর কলেজের ক্ষেত্রে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সশরীরে পাঠদান শুরু হবে প্রথমে। তবে প্রতিদিন একসঙ্গে সবাইকে স্কুল-কলেজে নিয়ে আসা হবে না। একটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে দুইদিন করে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মাউশি থেকে যে নির্দেশনাগুলো দেয়া হবে সেগুলো ঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা সেটি তদারকি করবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মাউশিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
এ বিষয়ে মাউশি পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করণীয় ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। দুই/একদিনের মধ্যে নির্দেশনাগুলো স্কুল-কলেজগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে মাস্ক পরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা করা, শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। আমাদের বেঁধে দেয়া নির্দেশনাগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা সেগুলো মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন মাউশিতে পাঠাতে হবে। ওদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ঘাটতি পূরণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল শনিবার দুপুরে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও পাঠদান বন্ধ থাকেনি। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকলেও টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রেখেছিলাম। যখন আমরা দেখলাম একটা সংখ্যক শিক্ষার্থীর টেলিভিশন ও অনলাইন ব্যবহারের সুযোগ ছিল না বলে তারা এর থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। তখন আমরা অ্যাসাইনমেন্টের ব্যবস্থা করেছি। এর মাধ্যমে আমরা সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছতে পেরেছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, খুব স্বাভাবিকভাবে আমরা ষোলোআনা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিকল্প করতে পারিনি। কোথাও কোথাও তো কিছু ঘাটতি রয়েছেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরে সেই ঘাটতি পূরণের জন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের রেমিডিয়াল ক্লাসেস করানোসহ নানা ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ওদিকে স্কুল-কলেজ খোলার পর প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে একদিন ক্লাস করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপমন্ত্রী বলেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাখাতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় অনলাইনে, অফলাইনে ও টেলিভিশনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করেছি। প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাসহ সব পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। উপমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী যে সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়েছেন তারপর থেকে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে ক্লাস শুরু করতে পারবো। প্রাথমিকভাবে একদিন করে ক্লাস নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি। আপাতত এটাই আমাদের পরিকল্পনা। তবে সেটা পরিবর্তন হতে পারে। এজন্য সর্বশেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আরও বেশিদিন ক্লাসে আনতে পারবো বলে আশা করি।
নওফেল বলেন, এই মুহূর্তে প্রাথমিকভাবে আমাদের চিন্তা হচ্ছে, করোনার সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণে রাখা। সংক্রমণ হার এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। স্বাস্থ্য খাতের ওপর তেমন চাপ পড়ছে না। উপমন্ত্রী বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শারীরিক উপস্থিতির মধ্যে নেয়ার যে প্রচেষ্টা আছে সেটা অব্যাহত থাকবে। এটাই আমাদের আপাতত লক্ষ্য। অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলবে। আমরা নতুন সিলেবাস প্রণয়নের রূপরেখা দাঁড় করিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার পরপরই নতুন সিলেবাস বাস্তবায়ন করতে পারবো। গত বছরের ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে ছুটি। করোনা সংক্রমণ উঠানামা করায় বার বার প্রস্তুতি নিয়ে খোলা যায়নি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।