অস্ত্র ও গুলি ‘বিক্রি করতে’ ঢাকায় গিয়ে শার্শা ছাত্রলীগের সম্পাদক আকুলসহ গ্রেফতার ৫

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ অস্ত্র চোরাকারবারির অভিযোগে যশোরের শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসাইনসহ ৫ জনকে ঢাকায় গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের তিনটি দল বুধবার রাতে মিরপুর, দারুস সালাম ও গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। অভিযানে ৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগজিন ও ৮টি গুলি ও একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। আটক আকুল হোসাইন শার্শা উপজেলার ঘিবা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। অন্য চার জন হচ্ছেন উপজেলার বেনাপোল থানা এলাকার ভবেরবেড় গ্রামের আজিবরের ছেলে ফজলু হোসেন, বোয়ালিয়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী মিলন হোসেন ও দুর্গাপর গ্রামের সিঅ্যান্ড এফ এজেন্ট ইয়ান ভাজার ছেলে আজিম উদ্দিন (২৭) এবং যশোর শহরের আমির হোসেনের ছেলে ইলিয়াস হোসেন।


গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, “অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীর একটি সংঘবদ্ধ দল দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা যশোর জেলার বেনাপোল থেকে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে সেগুলো সারা দেশে অপরাধীদের কাছে সরবরাহ করছিল। “বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী যশোর জেলার বেনাপোল এলাকার কে বা কারা এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত তা জানার জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে।” তদন্তের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা পায়, বুধবার রাতে চোরাকারবারিরা অস্ত্র ও গুলি বিক্রির জন্য প্রাইভেটকার নিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড হয়ে ঢাকায় ঢুকবে। “এই সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের তিনটি দল দারুস সালাম এলাকার দিয়াবাড়ীগামী, বেড়িবাঁধগামী এবং কল্যাণপুরগামী রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকে,” বলেন হাফিজ আক্তার।


অভিযানের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রাত আনুমানিক সোয়া ৩টায় গাবতলী ব্রিজের ইউলুপ দিয়ে একটি প্রাইভেটকার দ্রুতগতিতে উত্তর দিকে যেতে থাকে। এসময় দিয়াবাড়ী এলাকায় অবস্থান নেওয়া গোয়েন্দা দলকে রাস্তায় ব্যারিকেড দিতে বলা হয়, অন্য দল দুটি প্রাইভেটকারটির পেছনে ধাওয়া করে। রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় জট তৈরি করা হয়। অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, “জ্যামে আটকে পড়া গাড়িটিকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ঘিরে ফেললে চালক এবং পেছনের সিটের একজন লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। “তাদের দেহ তল¬াশি করার সময় আকুল হোসাইনের কোমরের পেছনে প্যান্টে গোঁজা এক রাউন্ড গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও গলায় ঝুলানো হ্যান্ডব্যাগে ৫টি বিদেশি পিস্তল এবং ৫ রাউন্ড গুলি ও আটটি খালি ম্যাগজিন পাওয়া যায়।” এছাড়া আব্দুল আজিমের কোমরে গোঁজা অবস্থায় এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ইলিয়াস হোসেনের কোমরে গোঁজা এক রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়ার কথা জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই দলের সহযোগী মিলন হোসেন ও প্রাইভেটকারের চালক ফজলুর রহমানকেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

হাফিজ আক্তার বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চক্রের হোতা আকুল নিজে এবং তার বিশ্বস্ত লোকজনের মাধ্যমে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অস্ত্র সরবরাহ করে আসছিল। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুইশর বেশি অস্ত্র আকুল নিজে বিক্রি করেছে।” অস্ত্র চোরাচালান ছাড়াও এ চক্রের সদস্যরা ‘তক্ষক’ নিয়ে প্রতারণা, সীমান্ত পিলার, সাপের বিষ, স্বর্ণ চোরাচালান, প্রতœতাত্ত্বিক মূর্তি, ইয়াবা, আইস এর মত মাদকের ব্যবসা করে আসছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে। আকুল হোসাইনের বিরুদ্ধ হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি , সোনা ছিনতাই, মারামারিসহ কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলা সংক্রান্ত ৮টি মামলা রয়েছে বেনাপোল পোর্ট থানায়। এদিকে আটক ফজলুর রহমানের পিতা আজিবর রহমান জানান, তার ছেলেকে বাড়ি থেকে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন ও মিলন হোসেন ডেকে নিয়ে যায় খুলনায় যাওয়ার জন্য।