বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা অনুষ্ঠানে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত : মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার বীরশ্রেষ্ঠ ও বীরউত্তম তালিকায় আওয়ামী লীগের একজনেরও নাম নেই

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায়, দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শহীদ রাষ্ট্রপতি বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে যে অনৈতিক প্রশ্ন তুলেছে, এর উত্তর জনগণ দিতে প্রস্তুত। এই স্বাধীন ভূখন্ড ও জনগণ সাক্ষী দেবে মুক্তিযুদ্ধে তার কী অবদান ছিল। আর মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের কী অবদান ছিল সেটি তাদের দলের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ড. কামাল হোসেনের কথায় স্পষ্ট উঠে এসেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টরের মধ্যে আওয়ামী লীগের একজন কমান্ডারেরও ভূমিকা নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, বীরশ্রেষ্ঠ ও বীরউত্তম খেতাব তালিকায় আওয়ামী লীগের একজনেরও নাম নেই। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধে কার কী অবদান ছিল সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার ন্যূনতম অধিকার আওয়ামী লীগের নেই। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার ভূমিকার প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে অত্যন্ত নিচু ও হীন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে যখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু চলছে সেটি থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘোরাতে তাদের এমন অনৈতিক অবান্তর প্রশ্ন।
গতকাল বুধবার দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। দলীয় কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার শুরুতে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দলের বৃহত্তর যশোরের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফসার আহমেদ সিদ্দিকী, জেলা কমিটির প্রথম সভাপতি অ্যাড.আজিজুর রব, সাবেক সভাপতি চৌধুরী শহিদুল ইসলাম নয়ন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল হুদা, সহসভাপতি প্রফেসর গোলাম মোস্তফা, সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, আলতাফ হোসেন, হত্যার শিকার শহীদ আব্দার ফারুক, আশিকুর রহমান আকুল, মাসুদুর রহমান প্রিন্স, ফেরদৌস হোসেন, কবির হোসেন পলাশসহ দলের প্রয়াত সকল নেতাকর্মীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। পাশাপাশি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রফিকুর রহমান তোতন ও প্রবীণ বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম, প্রফেসর আব্দুল ওহাবসহ দলের অসুস্থ সকল নেতাকর্মীর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

তিনি আরও বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক যে স্বাধীন ভূখন্ডটি অর্জিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে গভীর সংকটময় পরিস্থিতিতে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন। যতদিন আওয়ামী লীগ থাকবে ততদিন তাদেরকে শহীদ জিয়ার অবদানের কথা স্বীকার করতে হবে। তাকে হত্যার পর দেশের প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী শহীদ জিয়ার মাজার সরানোর কথা বলছেন। উনার (মন্ত্রীর) আফসোস হয় প্রতিদিন তার (শহীদ জিয়ার) সমাধিস্থলে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। আর গোপালগঞ্জের আরেকটি সমাধিতে কেউ যায় না। সেই হতাশা এবং যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তিনি এমন নিম্নমানের কথা বলছেন।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, যশোরে করোনা মহামারীর মধ্যে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অক্সিজেন, ওষুধ, খাদ্য ও সুরক্ষা সামগ্রি নিয়ে প্রতিনিয়ত জনগণের পাশে ছুটে গেছে। আর যশোরের ছয় সংসদ সদস্যকে জনগণ খুঁজে পায়নি। তিনি বলেন, সরকার করোনা ইস্যুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রেখে দেশের আগামীর চালিকাশক্তি তরুণ প্রজন্মকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে তরুণ প্রজন্ম তাদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেই ছাড়বে। অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে দল পুনর্গঠনের যে কার্যক্রম চলছে। এর মাধ্যমে ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই বিরোধী সরকারের ক্ষমতাচ্যূতির মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, আজকে আওয়ামীলীগ বড় গলায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। কিন্তু তারাই আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুরোপুরি ভুলুণ্ঠিত করেছে। জনগণ আজ আগ্রাসী, আধিপত্যবাদী শক্তির হাত থেকে মুক্তির জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। সে কারণে গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলার ফরমায়েসি রায়ে দীর্ঘদিন কারাবন্দী করে রাখার পর তাকে বর্তমানে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম আজাদ, নগর বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপর সভাপতি নূর-উন-নবী, জেলা যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ। পরিচালনা করেন জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন বাবু। উৎসবমুখর পরিবেশে সুসজ্জিত বাদক দল ও মিছিল নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই আলোচনা সভায় যোগ দেন।
পরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত ও দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ মুক্তি ও সুস্থতা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দলের প্রয়াত সকল নেতাকর্মী করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। সকালে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়। পরে দলীয় নেতাকর্মীরা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে সাথে নিয়ে কারবালা কবর স্থানে গিয়ে দলের বৃহত্তর যশোরের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের কবর জিয়ারত করেন। পরে দলীয় কার্যালয়ে এসে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক প্রেরিত ওষুধ ও সুরক্ষা সামগ্রি বিভিন্ন উপজেলা বিএনপির করোনা হেল্প সেলে প্রদান করেন। এদিকে বাদ এশা ঢাকা রোড পুরাতন কসবা জামে মসজিদে স্থানীয় বিএনপির আয়োজনে দলের প্রয়াত নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।