যশোর পৌরসভার দ্ররিদ্র এলাকা উন্নয়নের এক প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দরিদ্র এলাকার উন্নয়নে গৃহীত একটি প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লালদিঘি ও গাড়িখানা এলাকায় সরকার, এডিবি এবং ওএফআইসির অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ চলছে। লালদিঘির দক্ষিণপাড়স্থ সোনালী ব্যাংকের পেছনে বিগত ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর সাবেক পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু এই কাজের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ফলকে লেখা আছে, লালদিঘি, গাড়িখানা এলাকার রাস্তা, ড্রেন, ডাস্টবিন, স্ট্রিট লাইট, নলকূপ ও টয়লেট নির্মাণের কথা। কাজের চুক্তি মূল্য ৮০ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪৭ টাকা। পৌরসভা থেকে জানা গেছে, ওই টাকায় গাড়িখানা, পোস্ট অফিসপাড়া, লালদিঘিরপাড় এলাকায় কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।। কাজের মধ্যে রয়েছে ৭৮৫ মিটার ফুটপাত, স্লাভসহ ৭২২ মিটার ড্রেন, ৭টি টয়লেট, ৩টি নলকূপ এবং ১টি করে ডাস্টবিন ও স্ট্রিট লাইট। ইতিমধ্যে প্রকল্পের অর্ধেক টাকা ৩০৫ মিটার ফুটপাত, ২০০ মিটার ড্রেন এবং ৫টি টয়লেট নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে। অর্থাৎ ৮০ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪৭ টাকার মধ্যে এই কাজে ব্যয় করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে ৪৮০ মিটার ফুটপাত, ৫২২ মিটার ড্রেন, ২টি টয়লেট, ৩টি নলকূপ এবং ১টি করে ডাস্টবিন ও স্ট্রিট লাইট স্থাপনের কাজ করতে হবে।
সূত্র জানায়, ৫টি টয়লেটের মধ্যে প্রতিটি নির্মাণে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৪৯৮ টাকা। টয়লেটগুলোতে ১২টি রিং স্লাভ বসানোর কথা থাকলেও কোথাও তা বসানো হয়নি। অধিকাংশ টয়লেটের ময়লা অপসারণের জন্যে সরাসরি পার্শ্ববর্তী ড্রেনে পাইপ দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। টয়লেটগুলোর মেঝেও দেয়ালে টাইলস ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে নিম্নমানের টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। পৌরসভা বলছে, ৫টি টয়লেটের মধ্যে পোস্ট অফিসপাড়া ও মুজিব সড়কের পাশে একটি দরিদ্র এলাকায় এবং মাইকপট্টি এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এই টয়লেটের মধ্যে অনেক স্থানে সংশ্লিষ্ট বাসিন্দারা বাড়তি অর্থ ব্যয় করে ব্যবহার উপযোগী করছেন। বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজ চলছে লালদিঘিপাড়স্থ সোনালী ব্যাংকের পেছনে। সেখানে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। ইটের গাথুনি দিয়ে নির্মিত ড্রেনে অনেক নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার বালির বদলে স্থানীয় বালির সাথে সামান্য সিমেন্ট দিয়ে চলছে গাঁথুনির কাজ। যা সাথে সাথে ভেঙে পড়ছে। এখানে ১টি টয়লেট ও ১টি নলকূপ বসানো হবে। সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমনটি জানা যায়। যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নির্মিত একটি টয়লেটে বর্জ্য নিস্কাশনের কোন পথই তৈরি না করে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে।
এদিকে, প্রকল্পের অধীনে পোস্ট অফিসপাড়ায় ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানেও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে সোলিং করে ঢালাই দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে নিম্নমানের আমা ইট এবং নিম্নমানের বালি ব্যবহার করা হয়েছে। অবশ্য পৌরসভা বলছে, ইটের সোলিংয়ের ক্ষেত্রে ভিত বালি, গাথুনির ক্ষেত্রে কুষ্টিয়ার বালি এবং ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে পঞ্চগড়ের বালি ব্যবহারের কথা। অথচ ঢালাওভাবে নিম্নমানের ভিট বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার গাড়িখানা রোডে ১৫টি দরিদ্র পরিবার বসবাস করলেও তাদের জন্যে একটি নলকূপও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। পৌরসভা বলছে, ৩টি নলকূপ লালদিঘি, পোস্ট অফিসপাড়া এবং কালেক্টরেট স্কুলের আশপাশে স্থাপন করা হবে। এই কাজটি পরিচালিত হচ্ছে এসআইসি কমিটির মাধ্যমে। যার সদস্য সংখ্যা ১২ জন। এ বিষয়ে জানার জন্যে পৌর মেয়র হায়দার গণী খান পলাশের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পৌরসভর বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, কাজ ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে। কোন ত্রুটি হচ্ছে না। এসআইসি কমিটির মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। অবশ্য এসআইসি কমিটির সভানেত্রী রেহেনা আক্তার নিশীকে সরাসরি না পাওয়ায় তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।