এ সময়ে ত্বকের যত্ন

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কাগজে-কলমে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে মাত্রই শেষ হয়েছে বর্ষাকাল। তবে কবিগুরুর ভাষায়- শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। প্রকৃতিতে এখনো আছে বর্ষাকালেরই ছোঁয়া। কখনো টিপটিপ আবার কখনো বা ঝমঝম কলতানে প্রকৃতি অবগাহন করছে বৃষ্টিসুধায়। মাঝে মাঝে আবার দেখা দিচ্ছে আর্দ্র ও ভ্যাপসা আবহাওয়া।
এ সময়ে ত্বকে বিভিন্ন ছত্রাকসহ নানা অণুজীবের প্রকোপও দেখা দেয়। বিশেষ করে দেহের ভাঁজে ভাঁজে ও যেসব জায়গা বেশি ঘামে যেমন- উরু বা বগলের ভাঁজে, স্তনের নিচে, পশ্চাদ্দেশে বা নাভির নিচে ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হয়। এতে চুলকানির সঙ্গে লালচে দাগও দেখা যায়।
আবার খালি পায়ে কাদা পানি বা নোংরা পানিতে হাঁটলে পায়ের তলায় বা আঙুলের ফাঁকে ছত্রাক জন্মাতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা এসব সমস্যায় ভুগে থাকেন আরো বেশি। বর্ষায় কিশোর-কিশোরীদের মাঝে ব্রণের আক্রমণও বৃদ্ধি পায়।
মুখের ত্বক তৈলাক্ত হওয়া ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে তা ফুসকুড়ির মতোও হয়ে পড়তে পারে। এসময়ে প্রকৃতিতে মশা-মাছি ও নানা ধরনের পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেড়ে যায়। আর এ থেকে বিশেষত শিশুদের অ্যালার্জি, ত্বকে ফোসকা পড়া বা লাল দানা হওয়ার সমস্যাও প্রায়শই দেখা যাচ্ছে।
ত্বকের সুরক্ষায় বর্ষাসহ বছরের পুরোটা সময়েই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা- কোনো সময়েই সানস্ক্রিন জাতীয় ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ রোদের ক্ষতিকারক সূর্যরশ্মি, তা যত কম সময়ই থাকুক না কেন, তা ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
তবে জরুরি বিষয় হলো- সঠিক ত্বকে সঠিক সানস্ক্রিনের ব্যবহার। যেমন তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে অবশ্যই পানির মাত্রা বেশি অর্থাৎ ওয়াটারবেজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে সানস্ক্রিনের সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর ৩০ মাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা ভালো। আবার রূক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ সানস্ক্রিন বাছাই করা যেতে পারে।
এক্ষেত্রেও ৩০ মাত্রার চেয়ে বেশি সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বিশিষ্ট সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভালো। আর সাধারণ ত্বকের ক্ষেত্রে ৩০-৫০ সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর মাত্রার সানস্ক্রিন ভালোভাবেই কাজ করে। অনেকেরই ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা আছে।
এজন্য যেসব সানস্ক্রিন ক্রিমে অক্সিবেনজোন, রেটিনাইল পামিটেট এবং প্যারাবেন্স জাতীয় উপাদান আছে; সেসব সানস্ক্রিন এড়িয়ে চলাই ভালো। এ সময়ে ত্বকের সুরক্ষায় চাই যথাযথ সচেতনতা। এজন্য কিছু কিছু বিষয় মাথায় রাখা যেতে পারে-
১. এ সময়ে ভারী জামা-কাপড় না পরে হালকা রঙের সুতি পাতলা জামা পরাটাই ভালো। সেইসঙ্গে জামা-কাপড় ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজে গেলে দ্রুত তা পাল্টে নিতে হবে। কারণ বেশিক্ষণ ভেজা কাপড় পরে থাকলে ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে বেশি। পাশাপাশি ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজলে ত্বক ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
২. নিয়মিত গোসল করতে হবে। গোসলের সময় জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. এ সময় সারাদিন জুতা-মোজা না পরে বরং হালকা চপ্পল বা খোলা স্যান্ডেল পরা ভালো। তবে খালি পায়ে হাঁটা পরিহার করুন। কারণ বৃষ্টি হলে রাস্তায় যত্রতত্র নোংরা পানি জমে থাকে। পায়ের ত্বককে এই নোংরা পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
৪. নারীদের ক্ষেত্রে ভেজা চুল না শুকিয়ে খোঁপা করা ঠিক না। গোসলের পর ভালো করে চুল শুকিয়ে নিয়ে তবেই চুল বাঁধতে হবে। না হলে মাথার ত্বকে খুশকিসহ ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
৫. এ ছাড়াও মেকআপ করতে চাইলে ওয়ারটারপ্রুফ মেকআপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মেকআপ করলেও তা যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন।
৬. বাড়িতে কারও ছত্রাক সংক্রমণ হয়ে থাকলে; তার জামাকাপড়, বিছানার চাদর ইত্যাদি আলাদা রাখতে হবে এবং ডিটারজেন্ট বা কাপড় কাচার সাবান দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে তা রোদে শুকাতে দিতে হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক বিভিন্ন অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ সেবন করতে পারেন।
৭. শরীর ও ত্বক ভালো রাখতে নিয়মিত মৌসুমী ফলমূল খাওয়া জরুরি। বেল, কলা, পেয়ারা, শসা, টমেটো, গাজর, পাতিলেবু, জাম্বুরা প্রভৃতি ত্বকে এনে দেয় সতেজতা। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। তাছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতেও সহায়তা করে।
৮. এ ছাড়াও খালি পেটে ছোলা ভেজানো বা মুগের ডাল ভেজানো খেলে ত্বক কিছুটা জীবাণুমুক্ত থাকে।
৯. সুস্থ থাকতে ও মনের মতো ত্বক আর চুল পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানিও পান করতে হবে।
প্রকৃতির পালাবদলের এ সময়ে থাকুন সতেজ ও রুখে দিন আপনার ত্বকের উপর যাবতীয় ক্ষতিকর প্রভাব।