সাংবাদিক হয়রানি : কুড়িগ্রামের সেই ডিসির শাস্তি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ একজন সাংবাদিককে হয়রানিমূলকভাবে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনের দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছে। এই শাস্তি দিয়ে গত ১০ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাকে গুরুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে লঘুদণ্ড দেয়া হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) উপসচিব মোছা. সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক থাকার সময় বাংলা ট্রিবিউন অনলাইনভিত্তিক ওয়েব পোর্টালের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’র অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের ১৮ মার্চ তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়। এতে বলা হয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা সুলতানা পারভীন গত বছরের ২৫ জুন লিখিত জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চান। ওই বছরের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত ব্যক্তিগত শুনানিতে তার দেয়া মৌখিক বক্তব্য ও লিখিত জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিভাগীয় মামলাটি তদন্তের জন্য তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আলী কদরকে তদন্ত বোর্ডের আহ্বায়ক করা হয়। বোর্ডের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে মোছা. সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী আনীত ‘অসদাচরণ’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, তদন্ত বোর্ডের প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনার পর সুলতানা পারভীনকে গুরুদণ্ড দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর তাকে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর বিধি ৭(৯) অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৮ জুন তাকে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। সুলতানা পারভীন ২২ জুন লিখিতভাবে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব দেন। দাখিল করা জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদনসহ অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয় বিবেচনা করে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ এর ৪ (২)(খ) বিধি অনুসারে তাকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার ‘লঘুদণ্ড’ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, বিভাগীয় মামলায় অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী সুলতানা পারভীনকে ‘দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা’র শাস্তি দেয়া হলো। তিনি ভবিষ্যতে এ মেয়াদের কোনো বকেয়া পাবেন না এবং এ মেয়াদ বেতন বৃদ্ধির জন্য গণনা করা যাবে।
২০১৯ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় জেলা প্রশাসন। ঘরে কোনো তল্লাশি চালানো না হলেও পরে ডিসি অফিসে নেওয়ার পর তারা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। আরিফুলের পরিবারের দাবি, কুড়িগ্রামের ‍ডিসি মোছা. সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি এসব করিয়েছেন। এ অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন রিন্টু বিকাশ চাকমা। অভিযোগ আছে এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব (আরডিসি) নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার এস এম রাহাতুল ইসলামও সঙ্গে ছিলেন। পরে ডিসি সুলতানা পারভীনকে সরিয়ে দেয়া হয়, প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয় অন্য অভিযুক্ত কর্মকর্তাদেরও। মুক্ত হন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামও। পরে নাজিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত শেষে নাজিম উদ্দিনের পদাবনতির সুপারিশ করা হয়েছে। রাহাতুল ইসলামকে তিন বছর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তাদের শাস্তি চূড়ান্ত করে এখনও প্রজ্ঞাপন জারি করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।