ফোনে আড়িপাতা বন্ধ চাওয়া রিটে সংযুক্ত হলো ১৭১৭ পৃষ্ঠার নজির

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফোনে আড়িপাতা প্রতিরোধে নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্ত চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনে দেশি-বিদেশি মোট ১৭১৭ পৃষ্ঠার নজির তুলে ধরেছেন রিটকারী আইনজীবীরা। রবিবার (১৫ আগস্ট) রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, রিট আবেদনটি আজ সোমবার হাইকোর্টে শুনানির জন্য উঠবে। শুনানির আগে ফোনে আড়িপাতা প্রতিরোধে নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলো তদন্তের বিষয়ে ১৭১৭ পৃষ্ঠার নজির রিটের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব নজিরের মধ্যে আল কোরআন, আল হাদিস এবং বাইবেলের উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা নজির হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে রিটের বিষয়বস্তু সংক্রান্ত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের আদালতের প্রদত্ত সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণ নজির হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘আমরা ১৭১৭ পৃষ্ঠার নজির তৈরি করেছি। এসব নজিরের অনুলিপি নিয়ম অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও বিটিআরসি-কে সরবরাহ করেছি।’
এর আগে ফোনে আড়িপাতা প্রতিরোধে নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্ত চেয়ে গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী। রিটকারী আইনজীবীরা হলেন অ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান, রেজওয়ানা ফেরদৌস, উত্তম কুমার বনিক, শাহ নাবিলা কাশফী, ফরহাদ আহমেদ সিদ্দীকী, মোহাম্মদ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, জি এম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), ইমরুল কায়েস ও একরামুল কবির।
রিট আবেদনটির ওপর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে। রিট আবেদনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।রিট আবেদনে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২০টি আড়িপাতার ঘটনা উলে¬খ করা হয়। এরমধ্যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সংলাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফোনালাপ, প্রয়াত সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ, ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের ফোনালাপ, মাওলানা মামুনুল হকের ফোনালাপ, যশোর-৬ সংসদীয় আসনের সদস্য শাহীন চাকলাদারের ফোনালাপ, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) ফোনালাপ, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ফোনালাপ, সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ফোনালাপ উলে¬খযোগ্য। এসব আড়িপাতার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়। রিট আবেদনে আরও উলে¬খ করা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই অধিকার সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উলি¬খিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ অন্যতম। এছাড়া ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অ্যাক্ট করা হয়। এই আইনের ধারা ৬ অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ধারা ৩০(চ) অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগের একান্ততা রক্ষা নিশ্চিত করা এই কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কমিশনের দায়িত্ব হলো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।