যশোরে অরক্ষিত হাসপাতাল : করোনা ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার উপায় নেই

0

বিএম আসাদ ॥ অরক্ষিত যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। করোনা সংক্রামণের হাত থেকে সুরক্ষার কোন উপায় নেই সেখানে। নেয়া হচ্ছেনা কোন কার্যকর পদক্ষেপ। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কে করোনা রোগী, কে সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তি, আর কে সুস্থ তা চেনার কোন উপায় নেই।
কোন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে কমপক্ষে ১৪দিন হোম আইসোলেশনে কিংবা করোনা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। আক্রান্তদের পরিবারের লোকজনকে ১৪দিন পরীক্ষামূলকভাবে রাখা হয় হোম আইসোলেশনে। সেখানে লকডাউনের আওতায় আনা হয় তাদের। গ্রামে-গঞ্জে বাড়ি, পাড়া-মহল্লায় স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেই কোন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। অপরিকল্পিত অবস্থায় চলছে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কার্যক্রম। এ খাতে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হলেও যশোরে করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। ফলে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছেন, যশোর ২৫০ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় পরিকল্পনা মাফিক ওয়ার্ড তৈরি করা হয়নি। আক্রান্ত ও উপসর্গ বহনকারী রোগীদের জন্যে পৃথক না করে এলোমেলোভাবে করা হয়েছে। যে কারণে করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের মূলভবনের সামনে একতলা দু’টি পুরনো পরিত্যক্ত ভবনে রয়েছে সন্দেহজনক করোনা রোগী। পেছনের একতলা ভবনের সাবেক সংক্রামক ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীরা। যাদের ভেতর অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া লোকজনের ভেতরও মৃত্যুর পর করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এসব ওয়ার্ডকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড বলা হয়েছে। মহিলা করোনা ওয়ার্ডের সামনে রয়েছে প্রসূতি ওয়ার্ড ও গাইনি ওয়ার্ড। যেখানে সন্তান সম্ভবা মায়েরা চিকিৎসা নিতে আসেন। করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রবেশপথে লেবার ও গাইনি ওয়ার্ড থাকায় সেখানে প্রসূতি মা ও গাইনি রোগীদের ভেতর করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ব্যাপক আশংকা রয়েছে। এরইমধ্যে ইতিপূর্বে এখানে করোনা রোগীর সন্ধান মিলেছে। আবার হাসপাতালের দ্বিতীয়তলায় রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের সামনে রয়েছে আইসিইউ ওয়ার্ড। করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের অপারেশন থিয়েটারের সামনে দিয়ে আইসিইউ ওয়ার্ডে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তাদের স্বজনরা গিয়ে মাঝে মধ্যে আইসিইউ ওয়ার্ডের ভেতর রোগীকে দেখভাল করে আসেন। বিছানা পেতে অবস্থান করে আইসিইউ ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটারের সামনের করিডোরে। এভাবে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে ওঠার সিঁড়ি পর্যন্ত রয়েছে করোনা রোগীর স্বজনদের অবস্থান। পুরুষ অর্থোসার্জারি ওয়ার্ডে যেতে হলে করোনা রোগীর কাছে যাওয়া এসব স্বজনদের সংস্পর্শে লাগে অন্য দর্শনার্থীদের। আইসিইউ ওয়ার্ডের তৃতীয়তলার উত্তরপাশে রয়েছে পৃথক দু’টি করোনা ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ড দু’টির অবস্থান মুখোমুখি হলেও পৃথক অবস্থানে থাকায় সাধারণ মানুষের জন্যে কিছুটা স্বস্তিদায়ক। আবার ৪র্থ তলায় সাবেক শিশু ওয়ার্ডটি করা হয়েছে মহিলা করোনা ওয়ার্ড। একই তলায় মহিলা করোনা ওয়ার্ডের মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড। যেখানে হৃদ, অ্যাজমাসহ অন্যান্য রোগীরা চিকিৎসা নেন। এ ওয়ার্ডেও বিভিন্ন সময় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন ও মহিলা করোনা রোগীর স্বজনরা একই সাথে একই জায়গায় অবস্থান করেন। হাসপাতাল ভবনের দক্ষিণাংশে ৪র্থতলায় উঠতে সিঁড়ি নির্মাণ করার কথা। কিন্তু এ পাশে কোন সিঁড়ি নির্মাাণ করা হয়নি। ফলে ভবনের উত্তর পাশে করোনা ওয়ার্ড ও মেডিসিন ওয়ার্ডে যেতে একই সিঁড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। হাসপাতালের মূল ভবনের সামনে পেছনে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড, উত্তর পাশে করোনা ওয়ার্ড (রেডজোন) ও আইসিইউ ওয়ার্ড। মাঝে মধ্যে সাধারণ রোগীর চিকিৎসা করোনা রোগীর প্যাথলজি আল্ট্রাসনো, এক্স-রে, সিটিস্ক্যানসহ হচ্ছে হাসপাতালে অন্যান্য রোগীও এসব সেবা নিচ্ছেন সেখানে। প্যাথলজি বিভাগে কোন ভেদাভেদ নেই। নেই করোনা রোগী চেনার উপায়। রোগীর ভীড়ে সব একাকার। একই সিঁড়িতে উঠানামা করা হয়। এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আক্তারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, করিডোরে অবস্থান করছে করোনা রোগীর লোকজন। এটা করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভয়ের ব্যাপার। তারা সেখান থেকে সরছেন না। পুলিশ দিয়ে সরানো হয়েছে। তারপরও মানছেন না তারা। হাসপাতালে জীবাণুনাশক ¯েপ্র করা এবং ¯েপ্র-মেশিনগুলোর অবস্থা জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি তার নলেজে নেই।