এক মাস বন্ধ থাকার পর চালু চৌগাছার ঐতিহ্যবাহি পশুহাট

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ প্রায় এক মাস পর জাকজমক ভাবেই শুরু হয়েছে চৌগাছার ঐতিহ্যবাহি পশুহাট। সকাল থেকেই শুরু হয় পশুবাহি বাহনের আগমন, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে পশু। এক সময় গোটা হাট এলাকা পশুতে ভরে উঠে। ক্রেতা বিক্রেতার সরব উপস্থিতিতে সৃষ্টি হয় মিলনমেলা, স্বস্তিতে হাটের সাথে সম্পৃক্তরা।
মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে গত দুই বছরে থেমে থেমে লকডাউনের কারনে অন্য সব কিছুর মতই থমকে যাই চৌগাছা পশু হাটের কার্যক্রম। বিশেষ করে গত ঈদুল আযহার আগে থেকে লকডাউনে টানা বন্ধ থাকে হাট। কোরবানীর আগে একদিন হাট চলার অনুমতি মিললেও প্রশাসনের কড়াকড়িতে সে ভাবে হাটের কার্যকম চলেনি। প্রায় ১ মাস পর বুধবার লকডাউন শীতিল হলে চালু হয় পশুহাট। স্বস্তি ফিরে আসে হাটের সাথে সম্পৃক্তদের মাঝে, প্রাণ চাঞ্চল্যতা ফিরে পাই হাটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা হোটেল, রেস্তোরাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মাঝে এমনটিই জানালেন হাটের সাথে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, শতশত পশুতে হাটে পা ফেলার জায়গা নেই। ব্যাপক উপস্থিতি ঘটেছে ক্রেতা আর বিক্রেতাদের। হাটে উপস্থিতিদের অধিকাংশ মানুষকেই মাস্ক পরতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য হাট কর্তৃপক্ষ প্রচার মাইকের মাধ্যমে অবিরাম প্রচার চালাতেও দেখা যায়। এদিন বেচা কেনা হয়েছে সন্তোষজনক তাই সকলেই মহাখুশি, হোটেল রেস্তোরায় বেচা বিক্রি ভাল হওয়ায় হোটেল মালিকরাও আছেন স্বস্তিতে।
কথা হয় ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলার পাতরা এলাকার গরু বিক্রেতা হারুন অর রশিদ, চৌগাছার দক্ষিন সাগর গ্রামের আব্দুল্লাহর সাথে। তারা বলেন, এলাকা থেকে গরু কিনে সপ্তাহে দুই দিন এই হাটে বিক্রি করে যা রোজগার হয় তাতেই চলে সংসার। টানা বন্ধের কারনে বেশ কষ্টে চলেছে দিন। কোরবানীতে গরু কিনে নোয়াখালীতে নিয়ে যায়, কিন্তু কাংখিত দাম না পেয়ে ফিরিয়ে আনি। সেই গরু আজ হাটে এনেছি, হাট চলাতে আমরা খুশি। হাটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা হোটেল ব্যবসী রাজু আহমেদ, সাজ্জাদ হোসেন, বাবুল আক্তার, চা বিক্রেতা ইকরামুল হোসেন বলেন, প্রায় ১ মাস হাট বন্ধ থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়, আজ হাট শুরু হওয়ায় বেচাকেনা ভালই হচ্ছে, আর যেন হাট বন্ধ না হয় সেদিকে নজর দিবেন সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ এমনটিই মনে করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। হাটের বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত রিপন হোসেন, আবু কালাম, হাফিজুর রহমান, আক্তার হোসেন, আমিনুর রহমান বলেন, পশুহাটের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অনেক মানুষ জড়িত, তাদের সংসার চলে হাটের রোজগারের উপরে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় তারা চরম মানবেতর জীবন যাপন করেছেন।
পশুহাটের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক গোবিন্দ কুমার রাহা বলেন, জীবিকা না জীবনটা আগে,তাই সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে আমরা সকলের নিরাপত্তা বিবেচনায় হাট বন্ধ রাখি। আজ চালু করেছি, সকলের মাঝেই প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। আবার লকডাউনের মত পরিবেশ যদি সৃষ্টি হয় সে সময়ে পশুহাট আওতামুক্ত রাখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ঠদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও যুবলীগ নেতা আনিছুর রহমান বলেন, মামলা জটিলতার কারনে হাট খাশ আদায় হয়। দীর্ঘদিন হাট বন্ধ থাকায় সরকার রাজস্ব হারিয়েছে আবার হাটের সাথে জড়িত অনেকেই কষ্টে পার করেছে দিন। হাটের প্রথম দিনে আমরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি, আগামী হাট গুলোতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে তিনি জানান।