সচেতনতাই বজ্রপাত থেকে রক্ষার পথ

0

এখন বর্ষার মৌসুম। ষড়ঋতুর এই দেশে আষাঢ় শ্রাবণ মাসে বর্ষণ স্নাত প্লাবন লেগেই থাকে। আর প্রচন্ড বর্ষণে আকাশের বজ্রপাত হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক চমক। বজ্রপাতের প্রবল গর্জনে ঘর-বাড়ি থেকে মানুষের জীবনমান চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। বর্ষণসিক্ত বাংলাদেশে এমন দুর্যোগের মহাবিপদ সঙ্কেত লেগেই থাকে। বজ্রপাতে গণমানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও হাতে গোনার অবস্থায় থাকে না। হিসাব মতে এ বছর বজ্রপাতে ২৭২ জন মানুষের প্রাণহানি হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীতে নৌকাযোগে বউভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে বজ্রপাতে ১৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা এক অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগ। বুধবার দুপুর ১২টায় উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দক্ষিণপাকা গ্রামে পদ্মা নদীর তীরে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহতও হয় অনেক। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পার হতে গেলে প্রবল বর্ষণে নৌকা ঘাটে থামিয়ে রাখা হয়। তীরে একটি কুঁড়ে ঘরে আশ্রয় নেয়ার পর বৃষ্টি আর প্রবল বাজের ঘনঘটায় তাৎক্ষণিকভাবে অনেকেই মারা যায়। আহতদের শিবগঞ্জ উপজেলার নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। বজ্রাঘাতে এমন মৃত্যু হরহামেশাই ঘটার চিত্র গণমাধ্যমে ওঠে আসে।
সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি যেমন ভাবনার কারণ হয়েছে, পাশাপাশি বজ্রপাতে মৃত্যুর হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতের কারণে প্রাণহানিও দৃষ্টিকটূভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। বজ্রপাতের ঝুঁকির মধ্যে বিশ্বের ভেনিজুয়েলার এবং মারাকাইবো হ্রদ সবার আগে চিহ্নিত হয়ে আছে। আফ্রিকার কঙ্গো ও লাতিন আমেরিকার ব্রাজিলও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। তবে ঝুঁকির মাত্রায় বাংলাদেশও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। পরিবেশ বিপর্যয় ফোরামের এবং গবেষণা প্রতিবেদনে এ বছর ২৭২ জনের বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর প্রকাশ পায়। তাদের মধ্যে ৫৪ জন শিশু। ৩৯ জন নারী এবং ১৭৯ জন পুরুষ। বিভিন্ন কাজের তাগিদে পুরুষদের বেশি বাইরে থাকতে হয় ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই। ফলে, পুরুষদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, বুয়েট এবং দুর্যোগ ফোরামসহ আরও কিছু জরিপে গত একদশকে ২০১০ সাল থেকে দুই হাজারের বেশি মানুষ বজ্রাঘাতে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। বায়ুমন্ডলে ধনাত্মক এক ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জের গঠন ও পৃথকীকরণে বজ্রপাতের সূত্রপাত বলে জানা যায়।
এমন প্রাকৃতিক প্রলয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গেলে সচেতনতার বিকল্প অন্য কিছু নেই। বজ্রপাতের সময় কোনভাবেই খালি জায়গা, খোলা মাঠ এবং উঁচুস্থানে অবস্থান করা বিপজ্জনক। সহসা তেমন বিপদের মধ্যে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে, কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়তে হবে। বজ্রপাত শুরু হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোন দালানের নিচে বা কংক্রিটের ছাউনির ছায়ায় আশ্রয় নেয়া জরুরি। টিনের চালে কোনভাবেই যাওয়া সমীচীন নয়। উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার বা খুঁটি এবং মোবাইল টাওয়ার থেকে যথাসম্ভব দূরবর্তী স্থানে থাকতে হবে। বাসা বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি কিংবা বারান্দায় যাওয়া যাবে না। বজ্রপাতের আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দরজা, জানালা সব বন্ধ করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাদে যাওয়াও নিষিদ্ধ। বিপদ থেকে রক্ষা পেতে গেলে সতর্ক, সাবধানতাই অত্যন্ত জরুরি।