বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি : পানিতে নিমজ্জিত আমন বীজতলা

0

বাগেরহাট অফিস ॥ কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটে ফসলি জমি আমন বীজতলা ও আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনও পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে রোপা আমনের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের নাছির উদ্দিন পাহলান এবার ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগানোর জন্য এক শ কেজি বীজ ধান বুনেছিলেন। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে পচে গেছে। বছরের এক ফসলি জমির বীজতলা হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। তাফালবাড়ি গ্রামের নাছির পাহলানই শুধু নন তার মত কয়েক শ কৃষকের আমনের বীজতলা ধানের চারাগুলো (পাতো) বেশির ভাগ পচে গেছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলায় এক হাজার ৫৮৮ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ৯৬০ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে ৩৭৯ হেক্টর জমির। সাড়ে ১০ হেক্টর জমির পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রবিবার এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শরণখোলা, রামপাল ও মোংলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও আমন ধানের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। কবে নাগাদ পানি নেমে মাঠঘাট
আগের জায়গায় ফিরে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মঠেরপাঠ গ্রামের কৃষক আব্দুর খলিফা বলেন, ‘এক শ টাকা করে কেজি করে ধান কিনেছি, চারা দিয়েছি। ধান হচ্ছে চার মাসের ফসল, এই পানি নামার পরে আবারও ধান কিনে চারা দিতে প্রায় একমাস লেগে যাবে। যার ফলে আমাদের আমন ধান চাষে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কৃষি বিভাগ এবং সরকার যদি অন্য কোন জাতের ধান বীজ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে হয়ত আমরা বেঁচে যেতে পারব।
কচুয়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের চাষি মঞ্জু ফকির বলেন , ‘কয়েকদিন হল শসা বিক্রি শুরু করেছিলাম। এবার শসার ফলনও ভাল হয়েছিল। কিন্তু আজ ৬দিন ধরে গাছের গোড়ায় পানি। এই পানিতে শেকর পচে গেছে। পানি কমার দুই একদিনের মধ্যে শসা গাছগুলো ঢলে পড়বে। খুব ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের।’
শরণখোল উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, টানা বৃষ্টিতে এই উপজেলার শতভাগ মৎস্য ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। আমনের বীজতলা এখনও পানির নিচে রয়েছে। রবিশস্য ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ মানুষের দাবি অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইস গেট না থাকায় সহজে পানি নামতে পারে না। যার ফলে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকের থেকে বেশি সময় থাকে। বেড়িবাঁধে প্রয়োজনীয় সংক্ষক স্লুইস গেট নির্মাণসহ কৃষকদের
সহযোগিতার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, টানা পাঁচ ঁদিনের বৃষ্টিতে আমাদের বেশকিছু আমনের বীজতলা, পানের বরজ, আউশধান, আমন ধান ও গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা প্রাথমিক ভাবে যে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করেছি তাতে টাকার অংকে কৃষকদের অন্তত পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছি।