দীর্ঘ মেয়াদী লকডাউন কোনো সমাধান নয়

0

ঈদের ছুটির পর ১৪ দিনের কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল, যা শেষ হওয়ার কথা ৫ আগস্ট। এই লকডাউনে গার্মেন্টসহ সব কলকারখানা বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু গার্মেন্ট মালিকদের চাপের মুখে সরকার নতি স্বীকার করে। ১ আগস্ট রবিবার থেকে গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী সব শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়া হয়। আর সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গার্মেন্ট মালিকরা কথা দিয়েছিলেন, লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ঢাকায় থাকা শ্রমিকদের নিয়েই কারখানা চালানো হবে। যেসব শ্রমিক ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন, তাঁরা লকডাউনের পর কাজে যোগদান করতে পারবেন। এ জন্য তাঁদের চাকরি যাবে না কিংবা বেতন কাটা হবে না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। অনেক গার্মেন্ট থেকে ফোন করে কিংবা এসএমএস পাঠিয়ে শ্রমিকদের চাপ দেওয়া হয়, তাঁরা যেন ১ তারিখেই কাজে যোগ দেন। অতীতেও এমন পরিস্থিতিতে অনেক শ্রমিককে চাকরি হারাতে হয়েছে। তাই শ্রমিকরা ঝুঁকি নিতে চাননি, যে যেভাবে পেরেছেন ঢাকায় ফিরেছেন। ফেরিতে ছিল নজিরবিহীন উপচে পড়া ভিড়। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মাইলের পর মাইল স্ত্রী সন্তান নিয়ে হাঁটতে হয়েছে শ্রমিকদের। ৫০ টাকা বাসভাড়ার রাস্তা ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে পাড়ি দিতে হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। সব মিলিয়ে শনিবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত রাস্তায়-ফেরিতে মানুষের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষিতে রবিবার দুপুর পর্যন্ত গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। অতঃপর গতকাল তা বহাল রাখা হয় এবং পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানুষ যেভাবে ঢাকায় ফিরছে, তাতে তাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অনেক বেশি। ফলে আবারও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যেতে পারে। তাহলে হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা যে দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রাখা যাবে না, সেটি নীতিনির্ধারকদের আগেই বোঝা উচিত ছিল। আসলে শুধু রপ্তানিমুখী শিল্প নয়, অন্যান্য শিল্প-কারখানা কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও লকডাউনে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বহু কর্মী কাজ হারিয়েছেন। হারাবেন আরও অনেকে। পরিবহন সেক্টর রীরিতমতো মহাসংকটে পড়েছে। চালকসহ শ্রমিকরা ঘরে বসেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের যারা প্রণোদনা পেয়েছেন তাদের সাত দিনেরও কোরাক হয়নি। তারা এখন ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে চায়। এমনটি যে হবে তা আমরা আগেই বলেছিলাম এবং ২৩ তারিখের বদলে ২৭/২৭ জুলাই লকডাউনের কথা বলেছিলাম। এতে এক সাথে সব মানুষের ঢাকায় ফিরতে হতো না। পরিবহন সচল থাকলে স্বাস্থ্যবিধিও বিপপন্ন হতো না। আমরা জানি করোনায় যেভাবে ব্যাপক প্রাণহানি হচ্ছে, তা ঠেকানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই। তবে একথাও সত্য যে, এটি দীর্ঘ সময় ধরে চালানো যাবে না। সেই বাস্তবতাও আমাদের বুঝতে হবে। প্রতিরোধমূলক বিকল্প উদ্যোগগুলোতে জোর দিতে হবে। আমরা আশা করবো, সরকার দ্রুত লকডাউনের বিকল্প খুঁজবে। একই সাথে বিধি ভেঙে ঢাকা ফেরত শ্রমিক কর্মচারী সবার প্রতি বিশেষ নজর রাখবে জননিরাপত্তার স্বার্থে।