করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু সম্পর্কে সরকার মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে : ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার সংক্রমণের ‘আক্রান্ত ও মৃত্যু’ সংখ্যা নিয়ে সরকার জাতিকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকার যে হিসাব দিয়েছে তা সঠিক নয়। তাদের হিসাবে দেখা যাচ্ছে যে, ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জন গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন। এটা একদম ডাহা মিথ্যা কথা। মানুষ টেস্ট তো করতে পারছেন না। তারা উপজেলা পর্যায়ে টেস্ট দেন না। জেলা পর্যায়ে টেস্ট দেয়, সেখানে গিয়েও মানুষ টেস্ট করতে পারে না। ঢাকায় যে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো আছে সেখানেও দু’ঘণ্টা টেস্ট করা হয়। এরপর আর টেস্ট হয় না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণের কাছে যে তথ্যগুলো দেয় সেটা শুধুমাত্র তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, জনগনের বিভ্রান্ত করার জন্য, প্রতারণার জন্য। সরকার বলছে, আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৯১৪ জন মারা গেছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, পত্রিকাতেই আছে বাড়িতে মৃত্যুর সংখ্যা হচ্ছে ৬৫ ভাগ। তাহলে চিন্তা করেন। এই ২০ হাজার ৯১৪ জনের সঙ্গে ৬৫ ভাগ যোগ করেন। তাহলে এই সংখ্যা এক লাখের নিচে কখনোই না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে একটি পত্রিকায় হেডিং হচ্ছে-করোনা নিয়ে সরকারের নানা অসঙ্গতি। এই কথাটা আমরা বার বার বলে আসছি। ইফ ইউ ডোন্ট গ্যাট দেট এক্সজেট ডেটা-আপনি সমাধান করবেন কি করে? সুতরাং আপনি প্রথমেই ভুল করছেন এবং সেটা জেনেশুনে ভুল করছেন। আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, জনগনের সাধে প্রতারণা করছে এটা কোনো দায়িত্বশীল সরকার করতে পারে না।’
‘সরকার ছিনিমিনি খেলছে’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার করোনা মোকাবেলা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং জনগনের জীবন নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলছে। আমরা প্রথম থেকে বলছি যে, এটা যেহেতু বৈশ্বিক মহামারী এবং ভয়াবহ একটি বিষয়, এটাকে মোকাবেলা করতে হবে সকলকে সাথে নিয়ে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম একটা জাতীয় কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশেষজ্ঞসহ সমস্ত জনগনকে সম্পৃক্ত করে এই করোনা মহামারীকে মোকাবেলা করবার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, যেকোনা দুর্যোগ অথবা যেকোনো মহামারী অনেক সুষ্ঠু ও সন্দুরভাবে মোকাবেলা করা যায় যদি দেশের মানুষকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি। আজকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সম্পৃক্ত হতো, যদি সমস্ত এনজিওগুলো সম্পৃক্ত হতো, আজকে যদি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো সম্পৃক্ত হতে পারতো তাহলে দেখা যেতো যে, আজকে এই পরিস্থিতি এতো মারাত্মক আকার ধারণ করতো না।’
ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার যারা তাদের বিত্তের জন্য, তাদের টিকে থাকার জন্য শুধুমাত্র আমলাদের ওপর নির্ভর করছে এবং দেখা যাচ্ছে যে, সেই আমলাদেরই তারা করোনা মোকাবেলার চেষ্টা করছে। ফলে কি হচ্ছে যতটুকু সম্ভাবনা থাকে এটা নিয়ন্ত্রণে আনার সেটি তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে দুর্নীতি তা বর্ণনার বাইরে।’
তিনি বলেন, তিন শ’ টাকার জিনিস তারা তিন হাজার টাকায় নেয়, পাঁচ শ’ টাকার জিনিস তারা পঞ্চাশ হাজার টাকায় নেয় এবং আমরা দেখেছি যে, এখন পর্যন্ত যতগুলো তথ্য আমাদের কাছে এসছে, পত্র-পত্রিকায় এসছে যে, এই করোনা কালে দুর্নীতি করে তাদের (স্বাস্থ্য অধিদফতরের) ড্রাইভার পর্যন্ত চার থেকে পাঁচ কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।’
এখন গায়েবী মামলার মতো গায়েবী বেড, গায়েবী সংখ্যা, গায়েবী রোগী উড়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর তথ্য দিচ্ছে যে আইসিইউ শয্যা আছে। যেমন আপনার ভোলা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, জামালপুর-স্বাস্থ্য অধিদফরের হিসাবে এই পাঁচ জেলায় করোনা রোগীদের জন্য ২০টি আইসিইউ রয়েছে। আসলে এগুলোতে কোনো আইসিইউ নাই। মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। সিলেটে তারা বলেছেন, চারটা হাসপাতালে সরকারি হিসাবে ১৩৬ জন চিকিৎসাধীন ছিলো গতকাল পর্যন্ত। প্রকৃত পক্ষে সেখানে চিকিৎসাধীন আছে ৪৩৬ জন। তিন শ’ রোগী নাই-গায়েব। এখন গায়েবী মামলার মতো গায়েবী বেড, গায়েবী সংখ্যা, গায়েবী রোগী উড়ে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালও উদাও হয়ে গেছে। আপনারা দেখেছেন যে, একটা হাসপাতাল নাই হয়ে গেছে। এই হচ্ছে সরকারের মানুষের দুর্দিনে, মানুষের মারা যাওয়ার সময়ে যখন সে চায় যে, সরকার তার পাশে দাঁড়াবে, যখন সে চায় তার অন্তত চিকিৎসা হবে। অক্সিজেনের জন্য মানুষ হাহাকার করছে সেই অক্সিজেন নেই।’