চালের বাজার লাগাম ছাড়া

0

দেড় বছর ধরে চলা করোনা মহামারির মধ্যে মানুষের আয়-উপার্জন কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের অনেকে কাজ হারিয়েছেন, অনেকে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবহন খাতের শ্রমিকসহ অনেক খাতের শ্রমিকদের কাজ নেই, উপার্জন নেই। বিভিন্ন জরিপে উঠে আসছে মানুষের সীমাহীন দুর্দশার কথা। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপ অনুসারে এই মহামারির মধ্যে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। কমে গেছে তাদের ক্রয়ক্ষমতা। সরকারের সরকারের সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় এমন পরিস্থিতিতেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে, নানা ছলছুতা করে মানুষের পকেট কাটছেন এবং অন্যায় মুনাফা লুটছেন। বর্তমানে তেমনি একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে চালের বাজারে। দেড় মাসের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে সবচেয়ে কম দামের যে মোটা চাল, যা মূলত গরিব মানুষের খাদ্য, তারও কেজিপ্রতি দাম হয়েছে ৫০ টাকা। আর একটু ভালো মানের এক কেজি সরু চাল কিনতে লাগছে ৭০ টাকারও বেশি। এই অবস্থায় গরিব মানুষকে রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি সংবাদ গতকাল লোকসমাজে প্রকাশ হয়।
গত বোরো মৌসুমে দেশে চালের উৎপাদন ছিল সন্তোষজনক। পাশাপাশি চাল আমদানিও হয়েছে। সরকারি গুদামগুলোতে চালের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম ক্রমেই কমছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশে চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? কারণ একটাই। কিছু চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীর অনৈতিক মুনাফার বাসনা। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হিসাবে দেখা যায়, ধানের ক্রয়মূল্য, চাল উৎপাদন ও পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কেজি চালে ব্যবসায়ীদের মুনাফা হয় ১৩-১৪ টাকা। তাতেও তাঁরা সন্তুষ্ট নন। সুযোগ পেলেই তাঁরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে যান। শুধু চালের দাম বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত মুনাফা নয়, ধান কেনার সময়ও কৃষকদের বঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে। মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার সরকারি কার্যক্রম থাকলেও তা অপর্যাপ্ত এবং ধানের নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিত করতে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। তখনো মিলার ও বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে ধান কিনে। ব্যবসার নামে এমন স্বেচ্ছাচারিতা কোনোমতেই কাম্য নয়। দেশে ধান-চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপও খুব দুর্বল। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) কার্যক্রম থাকলেও এটি অত্যন্ত সীমিত। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সারা বছর চলা এবং এর পরিধি অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। টিসিবি ট্রাক সেলের মাধ্যমে চাল ছাড়া কিছু পণ্য দিলেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই তা নিতে পারে না। আবার কেউ কেউ বারবার পণ্য নিয়ে বাজারে বিক্রি করে। চাল-ডাল-তেলের মতো জরুরি খাদ্যপণ্যের রেশনিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।