ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষের উপর নির্মিত ব্রিজের নিচ দিয়ে যেতে পারে না নৌকা !

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে ঝিকরগাছার কপোতাক্ষ নদের উপর নবনির্মিত ব্রিজ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিজটি এত নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে বৃষ্টিতে নদের পানি বেড়ে গিয়ে তা ব্রিজের তলদেশ ছুয়ে যাচ্ছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে তারা ক্ষতিয়ে দেখছেন ব্রিজটি ভুল নকশায় তৈরি হয়েছে কিনা। ্
যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক এশিয়ান হাইওয়ে হিসেবে প্রস্তাবিত। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল যেতে হলে ঝিকরগাছা কপোতাক্ষ নদের উপর ৬০ বছরের পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। এ কারণে ব্রিজটি ভেঙে নদের উপর নতুন দুটি ব্রিজ নির্মাণ বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দেড়শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে এই ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি ব্রিজ নির্মাণ সমপন্ন হয়েছে। অন্যটির কাজ শিগগির শুরু হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রিজ প্রকল্প বিভাগ থেকে জানা যায়, প্রতিটি ব্রিজ ১২০ মিটার লম্বা ও ১৫ মিটার চওড়া। দুইটি করে পায়ার বা পিলার ও এবাটমেন্ট ওয়াল এবং ২১ গার্ডার বা ভিম দেয়া হয়েছে। পুরাতন ব্রিজটির চেয়ে দেড় মিটার উঁচু করা হয়েছে। ব্রিজটি পিসট্রেজ বা সমান করা আছে। কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনিকো এবং ডেনকো নামক প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু সম্প্রতি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ব্রিজটি দেখে এলাকাবাসী হতাশ হয়েছেন। ঝিকরগাছা উপজেলার মুদ্রণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, নতুন ব্রিজ অনেক নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্রিজের কারণে কপোতাক্ষ নদ আরো মরে গেলো। ঝিকরগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইমরান রশীদ জানান, নতুন ব্রিজ আমাদের আশাহত করেছে। এ ব্রিজের কারণে নদ তার নব্যতা আরো হারাবে। ব্রিজের নকশা ঠিক হয়নি। ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দীন জানান, আমরা শুনেছিলাম যে ব্রিজের কথা তা তো নির্মাণ হলো না। পুরাতনটির নিচ দিয়ে নৌকা, জাহাজ চলাচল করতে পারলেও নতুন ব্রিজটির নিচ দিয়ে একটি ডুঙ্গাও যেতে পারবে না। নদকে মেরে ফেলতে নতুন ব্রিজই যথেষ্ট বলে তিনি দাবি করেন তিনি।
কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের ওয়াকার্স পাটির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, নদীর উপর ব্রিজ করতে হলে অবশ্যই বিএডব্লিউটিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা অনুমোদন করতে হয়। কিন্তু ভুল নকশায় সওজ ব্রিজ দুটি নির্মাণ করছে। ব্রিজের নিচে দিয়ে কোন নৌযান চলাচল করতে পারবেনা। সরকারের যে নদী খননকাজ করছে ব্রিজটি তার গলার কাঁটা হিসেবে দাঁড়াবে।
উপজেলা প্রকৌশলী শ্যামল কুমার বসু জানান, বন্যা বা প্রবল বর্ষায় ব্রিজের নিচ দিয়ে কোনো কিছু চলাচল করতে পারবে না। ব্রিজের গার্ডার উচ্চতা কম করায় এমন হয়েছে। এক্ষেত্রে নদী পুনঃখনন করতে হবে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। আমরা খতিয়ে দেখছি ভুল নকশায় ব্রিজটি করা হয়েছে কিনা। কেননা শিগগিরই আমাদের কপোতাক্ষ খনন কাজ শুরু করা হবে। ৮শ কোটি টাকা এই কাজের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩৪ কিলোমিটারের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ভুলভাবে ব্রিজটি করা হলে সবার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ব্রিজ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান জানান, বিশেজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্রিজ দুটির নকশা করা হয়েছে। পুরাতন ব্রিজের মাপে এটি করা হচ্ছে। নদীর পানি যদি গার্ডারে লেগে যায় তাহলে নদী খনন করতে হবে। তানাহলে নিচ দিয়ে নৌযান চলতে পারবেনা।