হত্যার নেপথ্যে শংকরপুরের প্রভাবশালী এক যুবক টুনি শাওন হত্যার সাথে জড়িত অভিযোগে আরও তিনজন গ্রেফতার ,অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতাসহ নানা বিরোধের জের ধরে যশোর শহরের শংকরপুরে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ শেখ শাওন ওরফে টুনি শাওন খুন হয়। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে আরও ৩ জন আটক করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত রোববার রাতে শহরের ষষ্ঠীতলা ও শংকরপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকুসহ দুটি ধারালো অস্ত্র ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই হত্যার নেপথ্যে শংকরপুরের প্রভাবশালী এক যুবক জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে। মূলত ওই যুবক শংকরপুরস্থ বাসটার্মিনাল কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
সোমবার দুপুরে ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আটক ৩ জন হলেন, শংকরপুর মুরগির ফার্মগেট এলাকার রবিউল ইসলাম সরদারের ছেলে ইয়াসিন হাসান ওরফে রানা (২০), ঝিকরগাছার জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের আমিন মোড়লের ছেলে বর্তমানে যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদের পূর্ব পাশের বাসিন্দা জয় (১৯) ও ঝিকরগাছার ইন্তা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদের বিশ্বাসের ছেলে হাফিজুর রহমান বিশ্বাস ওরফে ভ্যাবো (৩০)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত আলামতের মধ্যে রয়েছে ১টি চাকু, ১টি চাইনিজ কুড়াল ও ১টি মোটরসাইকেল।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, নিহত টুনি শাওন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তার বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ ৭ টি মামলা রয়েছে। অপরদিকে টুনি শাওন হত্যার সাথে জড়িতরাও সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। তাদের মধ্যে অন্তঃকলহ ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় প্রাণ বাঁচাতে টুনি শাওন স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম অফিসে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। কিন্তু ঈদের কারণে ওই অফিসে লোকজন ছিলোনা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হত্যাকারীরা ভেতরে ঢুকে তাকে হত্যা করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছেন রাজনৈতিক পরিচয়দানকারীরা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। তবে সন্ত্রাসীদের মদদদাতা যেই হোক তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা রাজনৈতিক পরিচয়দানকারীরা কারা সাংবাদিদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত করা হচ্ছে। তাদের নাম অবশ্যই প্রকাশ পাবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) বেলাল হোসাইন, ডিবি পুলিশের ওসি রূপন কুমার সরকার, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর মো. রোকিবুজ্জামান, ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম, এসআই মো. শামীম হোসেন প্রমুখ।
ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, নানা তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার রাত দেড়টার দিকে ষষ্ঠীতলার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে রানা ও ভ্যাবোকে আটক করা হয়। এ সময় রানার স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু বাথরুমের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তার কাছ থেকে একটি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়, যেটি সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে থাকে। এরপর রাত আড়াইটার দিকে শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত জয়কে নিজ বাসা থেকে আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে বেজপাড়ার জনৈক অ্যাকুরিয়াম ব্যবসায়ী বাবুর বাড়ি থেকে হত্যা মিশনে অংশ নেয়া সন্ত্রাসী গোল্ডেন ফিরোজের একটি ইয়াহামা আরএক্স মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এই হত্যার নেপথ্যে শংকরপুরের প্রভাবশালী এক যুবক জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে। মূলত ওই যুবক শংকরপুরস্থ বাসটার্মিনাল কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। প্রভাবশালী ওই যুবকের আশঙ্কা, টুনি শাওনের ভাই শাহাবুদ্দিন কারাগার থেকে মুক্তি পেলে বাসটার্মিনাল কেন্দ্রিক তার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন। টুনি শাওনকে সরিয়ে দিতে পারলে ভাই শাহাবুদ্দিন দুর্বল হয়ে পড়বেন এমন পরিকল্পনা করে তার আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে তাকে হত্যা করিয়েছেন। তবে হত্যার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের কৌশলে বোঝানো হয় যে, অনি ও আকাশকে হত্যা প্রচেষ্টার সাথে টুনি শাওন জড়িত। এছাড়া ১৫দিন আগে বাসটার্মিনাল এলাকায় গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন চুরির সাথে জড়িতদের শনাক্ত এবং আটক করেন। টুনি শাওন চুরির সাথে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে দিয়েছিলো বলে প্রভাবশালী যুবক সন্দেহপোষণ করেন। এসব নানা বিষয় মাথার ভেতর ঢুকিয়ে টুনি শাওনের প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আটককৃতদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, টুনি শাওন হত্যাকাণ্ডে দুটি মোটরসাইকেল ব্যবহার হয়েছিলো। যার একটিতে গোল্ডেন ফিরোজ ও জয়সহ ৩ জন ছিলো। হত্যার পর গোল্ডেন ফিরোজ ও জয় মোটরসাইকেলে করে ঝিকরগাছায় যায়। পথে নতুনহাটে মোটরসাইকেল নষ্ট হয়ে গেলে সেখানকার একজন মিস্ত্রি দিয়ে মেরামত করা হয়। পরে ঝিকরগাছা থেকে তারা যশোরের রূপদিয়া এলাকায় যায় গোল্ডেন ফিরোজের চাচা বাড়িতে। সেখানে গোল্ডেন ফিরোজকে নামিয়ে দিয়ে জয় মোটরসাইকেল নিয়ে যশোরে চলে আসে এবং বেজপাড়ার পূর্ব পরিচিত অ্যাকুরিয়াম ব্যবসায়ী বাবুর বাড়িতে গাড়িটি রেখে দেয়।
অপরদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইনসপেক্টর মো. রোকিবুজ্জামান জানান, আটক ৩ জনকে সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে রানা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহাদী হাসান তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে বিচারক আটক ৩ জনকে কারাগারে পাঠানোার আদেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শংকরপুরে টুনি শাওন হত্যার ঘটনায় এর আগে মোহাম্মদ আলী, বিল্লাল হোসেন মৃদুল ও মানিক নামে ৩ জনকে আটক করে পুলিশ।