চৌগাছার জগদীশপুরে সাতশ’ বছর ৪ তেঁতুল গাছ এখনও সতেজ

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুর গ্রামের মিয়া বাড়ির সামনে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ৪টি তেঁতুল গাছ। বিশাল আকারের গাছগুলি দেশের সব থেকে বয়স্ক তেঁতুল গাছ বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এলাকার বয়স্ক মানুষদের ধারণা গাছগুলির বয়স সাড়ে ৬শ বছরের উপরে। কেউ কেউ মনে করেন এর বয়স ৭ শ বছর পেরিয়েছে। এলাকাবাসী মনে করেন একটু উদ্যোগ নিলে এটি বিশ^ ঐতিহ্যের অংশ হতে পারে।
গাছ চারটির জন্মকাল ও বয়স নিয়ে এলাকায় রয়েছে নানা রকম জনশ্রুতি। বয়স্কদের সাথে কথা হলে তারা জানান, এ গ্রামের পুটি মোহাম্মদ বিশ্বাস নামে একজন লোক ১শ ১৪ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি ৯০/৯৫ বছর আগে মারা যান। তিনি বলতেন, তার জ্ঞান বুদ্ধি হবার পর থেকেই তেঁতুল গাছগুলি একই রকম সবুজ দেখেছেন।
গ্রামবাসীরা জানান, এ গ্রামের কৃতী সন্তান ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, রাষ্ট্রদূত এম মনিরুজ্জামানের সাথে প্রায় ৪০ বছর আগে ইটালিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ বেড়াতে এসেছিলেন। কৌতুহলবশত তিনি এই তেঁতুল গাছের বয়স জানতে চাইলে কেউ সে সময় সঠিক বয়স বলতে পারেননি। পরবর্তীতে কয়েক বছর পর ওই বিশেষজ্ঞ আবারও জগদীশপুর গ্রামে আসেন এবং গাছের (কাঠের) মধ্যে এক ধরণের যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে এবং ছাল পরীক্ষা করে জানান ওই গাছের বয়স ৬ শ ৩০ বছর। সে হিসেবে গাছের বর্তমান বয়স ৬ শ ৭০ বছর।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আ.ন.ম মোস্তাদুদ দস্তগীর ও বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালেয়র সাবেক অতিরক্ত সিচব আ.শ.ম ইমদাদুদ দস্তগীর নামের দুই ভাইয়ের গ্রামের বাড়ি জগদীশপুর। তাদের গ্রামের বাড়ির সামনে এ চারটি তেঁতুল গাছ রয়েছে। সবচেয়ে বড় গাছটির নিচে পাকা করে জনসাধারণের বসার জায়গা করে দেওয়া হয়েছে। তারা উভয়ে জানান তাদের পিতা ডা. এহিয়া হোসেন বেঁচে ছিলেন ১০৬ বছর তিনি বলতেন ছোট বেলা থেকেই গাছগুলোকে এমন সবুজ সতেজ দেখে আসছেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের চৌগাছা উপজেলা শাখার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযাদ্ধা ডা. নুর হোসেনের বাড়ি এই জগদীশপুর গ্রামে। তিনি বলেন তিনি তার পূর্বপুরুষদের নিকট থেকে শুনেছেন তারা জন্মের পর থেকেই গাছগুলোকে সবুজ থকথকে দেখে আসছেন।
চৌগাছা মৃধাপাড়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আযাদ, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন, চৌগাছা জিসিবি আর্দশ কলেজের অধ্যক্ষ ও চৌগাছা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু জাফর জানান, এই গাছগুলো দেখার জন্য জীবনে বহুবার জগদীশপুর গ্রামে গিয়েছি। তাদের মতে, যতবার গিয়েছেন ততবারই অবাক হয়েছেন গাছগুলোর সতেজতা দেখে। তারা সবাই গাছগুলো বিশ্ব ঐতিহ্যর অংশ করার দাবি জানান।
চৌগাছা প্রেসক্লাবের সভাপিত জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন আমার পিতা মরহুম আতিউর রহমান চৌগাছা উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন বাবার সাথে সে সময় অনেকবার গিয়েছি তেঁতুল গাছগুলো দেখার জন্য এখনও সময় পেলে মাঝে মাঝে যাই।
এলাকার মানুষের দাবি গাছগুলোকে বিশ্ব পুরাতন ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। এছাড়া এই গ্রামে পর্যটকেদর থাকার জায়গা করলে এর দর্শনার্থী আরো বাড়বে বলে তাদের বিশ^াস।