মনিরামপুরে করোনার ভয়াবহতায় মানবসেবা করে চলেছেন যারা

0

মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর) ॥ সবখানে যখন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা, তখন যশোরের মনিরামপুরে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় সকল ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী, ধর্মীয়, পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ অধিকাংশ সংগঠনের সদস্যরা মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে রাত-দিন ছুটে চলেছেন করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে। কেউ নিয়ে যাচ্ছেন অক্সিজেন, কেউ নিয়ে যাচ্ছেন ওষুধ খাবারসহ নিত্যপণ্য। আবার কেউ নিয়ে যাচ্ছেন করোনা রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা মানুষের বিবেক কিছুটা হলেও জাগ্রত করেছে।
মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে মনিরামপুর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে অন্তত দেড় শতাধিক নারী-পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনা সংক্রমণ বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ৫ থেকে ৭ জনের। আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় অর্ধশত। সাধারণ মানুষ ছাড়াও আক্রান্ত হয়েছেন ইউএনও, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সসহ প্রশাসনের অনেক ব্যক্তিই। করোনায় আক্রান্ত ও মুত্যুর হার প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানুষের মাঝে করোনা এখন চরম আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনায় কোন ব্যক্তি মারা গেলেও আত্মীয় স্বজনরাও মরদেহটি সৎকার করতে ভয় পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা মৃতদেহগুলো সৎকার করছেন। অন্যদিকে করোনা আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে চলেছে। ফলে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সঙ্কট। আর এ সময় সকল ভেদাভেদ হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী, ধর্মীয়, পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ অধিকাংশ সংগঠনের সদস্যরা মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে রাতদিন ছুটে চলেছেন করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে। মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা সংগঠনগুলোর মধ্যে তাকওয়া ফাউন্ডেশন, বিএনপির ‘হেল্প সেল’ উপজেলা ছাত্রলীগের ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’, মনিরামপুর অক্সিজেন ব্যাংক, মনিরামপুর সমিতি ঢাকা, সিটিপ্লাজা যশোর, ঐক্যবন্ধন, খেদমতে খলক ফাউন্ডেশন, রাজগঞ্জ হাই স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি, বন্ধন’র নাম উল্লেখযোগ্য। করোনা মহামারিতে মানবিক সেবা দিয়ে ইতিমধ্যে তারা জননন্দিত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, হারুন অর রশিদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ সোহান, রাকিব হাসান, উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মুরাদুজ্জামান, ফজলুর রহমান, হাদিউজ্জামান, স্বেচ্ছাসেবী আল হেলাল মামুন, তাকওয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়কারী নাসিম খান, আশরাফ ইয়াসিন, বন্ধনের মুরশিদ হাসান ইমন, ঐক্যবন্ধনের মাহমুদ হাসান সোহাগসহ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী। এসব সদস্য ইতিমধ্যে তিন শতাধিক করোনা ও উপসর্গে আক্রান্তদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সেবা দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু, পৌর কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী, সুমন দাসসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সদস্য বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পৌরশহরের কামালপুরে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাতে তার শ^াসকষ্ট বেড়ে গিয়ে অবস্থার চরম অবনতি হলে রাত দুটোর দিকে বিএনপির হেল্প সেলের তত্ত্বাবধায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুর নেতৃত্বে হারুন অর রশিদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ সোহানসহ কয়েকজন সদস্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মেডিকেল অফিসার ডা. মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাতকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে হাজির হন। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে অক্সিজেনসহ চিকিৎসাসেবা পেয়ে তিনি এখন বেশ সুস্থ। আবুল কালামের ছেলে পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম অনিক ফয়সাল জানান, তার পিতার চরম মুহূর্তে হেল্প সেলের সদস্যরা ছাড়াও তাকওয়া ফাউন্ডেশন ও উপজেলা ছাত্রলীগ সাড়া দিয়ে মানবিকতার যে পরিচয় দিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। শুধুমাত্র আবুল কালামকে নয়, এভাবেই তারা রাতদিন সেবা দিয়ে চলেছেন করোনা আক্রান্ত খাটুয়াডাঙ্গার আনোয়ারা বেগম, মোহনপুরের কার্ত্তিক কর, মাছনার ফিরোজা বেগম, নিলুফার ইয়াসমিন, কামালপুরের দুলাল চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন এলাকার তিন শতাধিক ব্যক্তিকে। তাকওয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বকারী নাসিন খান ও ইয়াছিন আশরাফ জানান, অক্সিজেন সেবা ছাড়াও তারা এ পর্যন্ত অর্ধশত মৃতদেহ সৎকার করেছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমান মহামারিতে দলের চেয়ে মানবিকতাকে প্রাধান্য দিয়েই তারা সেবা দিয়ে চলেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানান, সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনাকালীন সময়ে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।